অর্ণব আইচ: নারী পাচারকারী ধরতে জুড়ি ছিল না তাঁর। কর্মদক্ষতায় সাব-ইন্সপেক্টর থেকে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ও পরে বদলি হয়ে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার হয়েছিলেন দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা পুলিশের কোনও থানার প্রথম মহিলা ওসি (OC) হয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে এই পুলিশকর্তার মৃত্যুর পর শোকস্তব্ধ লালবাজারের কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এই গোয়েন্দা বিভাগেই বহু বছর কর্মরত অবস্থায় ছিলেন দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়। এদিন এই পুলিশকর্তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। শোক প্রকাশ করেছে কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। আকস্মিক এই মৃত্যুর ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়েছে তাঁর পরিবার। এদিন সকালে দাদপুরে দুর্ঘটনার খবর শোনামাত্রই তাঁর স্বামী ও ছেলে ছুটে যান হাসপাতালে।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশে যোগদান করার পর থেকেই কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত তৎপর ছিলেন দেবশ্রী। কলকাতার বেশ কয়েকটি থানার সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন তিনি। গোয়েন্দা বিভাগের মিসিং পার্সন স্কোয়াডের অতিরিক্ত ওসি ছিলেন। পরে ওই শাখার ওসিও হন। নারীপাচার দমন শাখার দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় কলকাতার বহু ম্যাসাজ পার্লারে হানা দিয়ে বন্ধ করেছিলেন মধুচক্র। তাঁর উদ্যোগে বন্ধ হয়েছিল নারী পাচার। বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে তাঁকে আমেরিকায় পাঠিয়েছিল কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কর্মরত এক পুলিশ আধিকারিক জানান, আয়লা ঝড়ের পর দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা যাতে কলকাতায় পাচার না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর ছিল তাঁর। কলকাতায় জয়েন্ট এন্ট্রান্স ভুয়া পরীক্ষার্থী মামলায়, বিহার থেকে মহিলা ভুয়া পরীক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে কলকাতা নিয়ে আসার ব্যাপারে বড় উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
হেয়ার স্ট্রিট থানার অতিরিক্ত ওসি ছিলেন তিনি। পরে উত্তর বন্দর থানা ও তারাতলা থানা ওসির দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই আধিকারিক। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পদোন্নতি পেয়ে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার পদে যোগদান করেন। কলকাতা পুলিশের ডিসি (মহিলা বিভাগ)-এর দায়িত্ব নেন। ২০১৬ সালে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে উত্তরবঙ্গে বদলি হন তিনি। তাঁর স্বামীও প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক। তাঁর স্বামী ও ছেলে মূলত কলকাতায় থাকতেন। এদিন সকালে দেবশ্রী চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে পর্ণশ্রী বনমালী নস্কর রোডের গাবতলায় তাঁর বাড়িতে আসেন আত্মীয়রা। এদিন তাঁর এক আত্মীয় জানান, দেবশ্রী সপ্তাহের শেষে স্বামী ও ছেলের কাছে আসছিলেন। তখনই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। হুগলি থেকে তাঁর মরদেহ কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তাঁকে চোখের জলের শেষ শ্রদ্ধা জানান পরিজন ও সহকর্মী পুলিশ আধিকারিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.