অভিরূপ দাস: যেন খুব কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখা। তারপর ফিরে আসা। যদিও অতশত বোঝে না আট বছরের মুবাশিরা মল্লিক। টানা ৭২ ঘণ্টা কোমা থেকে উঠে আপাতত বারুইপুরের বাড়ি ফিরে খেলতে চাইছে সে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের কথা। বাড়িতেই মাটিতে শুয়েছিল মেয়েটি। ছোট্ট একটা পোকা কামড়ে দিয়েছিল নাকে। সেখান থেকে জ্বর, মাথা ব্যথা। প্লেটলেট নামছিল হুড়মুড়িয়ে। মেয়েকে নিয়ে প্রথমে বারুইপুর হাসপাতালে যান বাবা সেলিম মল্লিক। সেখান থেকে চিত্তরঞ্জন। তিন হাসপাতাল ঘুরে যখন ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে পৌঁছন মেয়ের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কথা বলতে পারছে না। একরত্তিকে ভর্তি করা হয় ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে। জ্বরের কারণ পরীক্ষা করতে গিয়েই চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন। ‘মাইটের’ কামড় থেকেই ছড়িয়েছে স্ক্রাব টাইফাস। টানা সাত দিন ভেন্টিলেশনে।
সেখান থেকে কোমায়। টানা তিনদিন যমে-ডাক্তারে টানাটানি। অবশেষে বৃহস্পতিবার ভোরে কোমা থেকে বেড়িয়ে এল মুবাশিরা। আইসিএইচ এর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাস প্রসূন গিরির কথায়, প্রচণ্ড জ্বর, পেট ব্যথা ছিল বাচ্চাটির। থেকে থেকেই ভয়ংকর খিঁচুনি উঠছিল। স্ক্রাব টাইফাস মস্তিষ্কে আঘাত করায় মেনিঙ্গো এনসেফালাইটিস দেখা যায়। ভয় ছিল আরও। এ রোগে মস্তিষ্ক ফুলে বেশিরভাগ সময়েই রোগী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। কিন্তু আট বছরের মুবাশিরাকে বাঁচাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি শিশু হাসপাতালের ‘পিকু’ টিম। সঞ্চারি, সৌরভ, প্রসেনজিৎ, দেবোপমা, অর্ঘ্য, হাসান, তানিয়া, রোহিত, দীপ্তায়নের চেষ্টাতেই আজ বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথে মুবাশিরা। তার বাবার কথায়, “মেয়েকে যে আবার ফিরে পাব ভাবতে পারিনি।”
করোনার মধ্যেই রাজ্য জুড়ে ডালপালা মেলছে ‘স্ক্রাব টাইফাস।’ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি জানিয়েছেন, এই জ্বরের নেপথ্যে রয়েছে এক ধরনের মাকড়ের (মাইট) লার্ভা। এই মাকড় দংশন করলে শরীরে রিকেটশিয়া সুসুগামুসা নামে এক ধরনের জীবাণু অনুপ্রবেশ করে। ইতিমধ্যেই এ মরশুমে ১০ জন স্ক্রাব টাইফাসের রোগী এসেছিল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে। এ ধরনের কেস পেলে যত শীঘ্র সম্ভব স্ত্রাব টাইফাস নির্ণায়ক পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.