রিংকি দাস ভট্টাচার্য: ভরা হেমন্তেই শিরশিরানি টের পেয়েছে কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ। “শীত পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ কয়েকদিন আগে হাওয়া অফিসের কর্তার এই বক্তব্যের পরে অনেকের আলমারি থেকেই চাদর-সোয়েটার বেরিয়ে পড়েছিল। কিন্তু শীতের আমেজে গা সেঁকে নেওয়ার আগেই ফের ঘামতে শুরু করেছে কলকাতা। শীতের শিরশিরানির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘গাজা’। যদিও আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ রয়েছে তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে। এ রাজ্যে তাই ‘গাজা’র কোনও প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে না। কিন্তু পরোক্ষ প্রভাবে বৃহস্পতিবার থেকে বাংলার আকাশে মেঘ ঢুকতে পারে। এর জেরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বুধবার সকালে জানান, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে ২২-২৩ ডিগ্রিতে পৌঁছে যাবে।” মোদ্দা কথা এবার শীতের দফারফা হবে।
মূলত উত্তুরে হাওয়ার উপরেই শীত নির্ভর করে। উত্তুরে হাওয়ার গতি যত বাড়বে রাজ্যে শীতের দাপটও তত বাড়বে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের জন্য উত্তুরে হাওয়া উধাও হয়ে যায়। সমুদ্র থেকে গরম হাওয়া ঢুকে স্থলভূমির উত্তাপ বাড়ায়। রাজে এই পরিস্থিতির সম্ভাবনা এখন প্রবল। এদিন সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘গাজা’র অবস্থান ছিল চেন্নাই উপকূল থেকে ৬৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং নাগিপাট্টিনাম উপকূল থেকে ৭৬০ কিমি উত্তর-উত্তরপূর্বে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যা আছড়ে পড়তে পারে তামিলনাড়ুর পাম্বান আর কুড্ডালোরে উপকূলবর্তী এলাকায়।
এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে রাতের তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা পুরোদস্তুর। ফলে কয়েকদিন ধরে সকালের দিকে যে শিরশিরানি অনুভূত হচ্ছিল, তাতে ছেদ পড়বে। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাতাসের উঁচু স্তরে মেঘ ঢুকছে, যা আকাশকে মেঘলা করবে। পরে নিচুস্তরেও মেঘ ঢুকবে। যার জেরে দিনের তাপ রাতে বেরোতে পারবে না। ফলে বাড়বে রাতের তাপমাত্রা। এদিন আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.২ ডিগ্রি। গত কয়েকদিন ধরে আকাশ পরিষ্কার থাকায় শুকনো হাওয়ার আনাগোনা অব্যাহত ছিল। যার জেরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছিল স্বাভাবিকের আশপাশে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় হানা দিলে এক ধাক্কায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেকটা বাড়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। আসলে দক্ষিণবঙ্গ এবছর অন্য কারণে চটজলদি শীতের কামড় চাইছে। মূলত মরশুমি রোগ থেকে মুক্তি পেতেই শীতের আকঙ্ক্ষা প্রবল হয়েছে। পতঙ্গবিদ ও ভাইরোলজিস্টদের পর্যবেক্ষণ, তাপমাত্রার সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। তাপমাত্রার এক-দু’ ডিগ্রি হেরফেরে জীবাণুর দাপট দু’ থেকে তিনগুণ বেড়ে যায়। সব রোগের সঙ্গেই তাপমাত্রার সমানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। শীত এলে তাই শহরে রোগের প্রকোপও কমবে। তাই ঘূর্ণিঝড় ‘গাজা’র আঁচ পেয়ে মহানগরের মুখ ভার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.