Advertisement
Advertisement
R G kar Hospital

৯টি অ্যাকাউন্টে জমা ৪ কোটি ৭৫ হাজার টাকা, তহবিল বাঁচাতেই RG Kar আন্দোলনের ছুতো!

শুক্রবার মুখ‌্যসচিব মনোজ পন্থকে নতুন করে সরকারি হাসপাতালগুলির পরিষেবা ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে ছয়টি সুপারিশ-সহ ইমেল করেছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্ট।

Crores deposited for R G kar Hospital movement
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:October 26, 2024 10:35 am
  • Updated:October 26, 2024 10:39 am  

স্টাফ রিপোর্টার: অভয়া তহবিলের নামে ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব‌্যক্তি ও সংস্থার তরফে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। যে কটি অ‌্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে তাতে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলনের জন‌্য ৪ কোটি ৭৫ হাজার টাকা তুলেছেন। এর বাইরেও আরও কিছু অ‌্যাকাউন্ট থাকতে পারে। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের এইচডিএফসি ব‌্যাঙ্কের অ‌্যাকাউন্টে ১.৭ কোটি টাকার কথা ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত।

সাংবাদিক সঞ্জয় ভদ্র তাঁর ফেসবুকে শুক্রবার আরও আটটি ব‌্যাঙ্ক অ‌্যাকাউন্টের হিসাব দিয়েছেন। যেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জন্য তোলা টাকা জমা করা হয়েছে। এগুলো আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠনের নামে খোলা অ‌্যাকাউন্ট। এরমধ্যে একটি অ‌্যাকাউন্ট পুরনো। বাকি সব অ‌্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে আন্দোলনের সময়।

Advertisement

স্বাস্থ‌্যভবন অভিযানের সময় বহু জুনিয়র ডাক্তারদের নামে খোলা ব‌্যক্তিগত অ‌্যাকউন্টেও টাকা সংগ্রহ হয়েছে। এরমধ্যে ডাক্তার রিয়া বেরার অ‌্যাকাউন্টেও কয়েক লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। এই ডাক্তার রিয়া বেরা আর জি করের তরুণী চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের সময় হাজির ছিলেন। এছাড়াও আরও একাধিক চিকিৎসক ও ব‌্যক্তির নামে আন্দোলনের জন্য টাকা তোলা হয়েছে। ‘জিপে’-তে অনেকে আন্দোলনের জন্য অনেক আন্দোলনকারী ডাক্তারদের টাকা পাঠিয়েছেন। ফলত মোট কত টাকা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে উঠেছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন।

সঞ্জয় তাঁর ফেসবুক পোস্টে যে ৯টি অ‌্যাকাউন্টের হিসাব দিতে পেরেছেন সেখানেই দেখা যাচ্ছে মোট ৪ কোটি ৭৫ হাজার টাকা উঠেছে। এবার অনশন ও ধরনা তুলে নিয়ে সরকারি বিভিন্ন কমিটিতে ঢোকার প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার পর আমজনতার কাছ থেকে তোলা এই বিপুল টাকা খরচের হিসাব দেওয়ার দায় এসে পড়ছে আন্দোলনকারীদের উপরে। বস্তুত, সেই কারণে তহবিলের কোটি কোটি টাকার হিসাব আড়াল করতেই তথাকথিত নানা ঘরোয়া আন্দোলনের ছুতো সামনে রাখতে বাধ‌্য হচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের নেতাদের একাংশ।

আজ, শনিবার গণকনভেনশনের নামে আর জি করে তেমনই একটি কর্মসূচি নিয়েছে ফ্রন্ট। আর এই সুযোগে অভিভাবক এবং আন্দোলনের সমর্থক ছদ্মবেশে বাম ও অতিবাম কর্মীরা দলে দলে কনভেনশন হলে ঢুকে ভিড় বাড়াতে পারবে। বহিরাগত এই সমস্ত বাম ও অতিবাম পার্টি ক‌্যাডাররা হলে এলে সমাবেশের উত্তাপও বাড়িয়ে তোলা যাবে। সে ক্ষেত্রে এই জমায়েতের ছবি এবং ফুটেজ সোশাল মিডিয়ায় তুলে আন্দোলনের নামে আরও তহবিল সংগ্রহ করতে সুবিধা হবে বলে শুক্রবার স্বীকার করেছেন জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের নেতাদের একাংশ।

অন‌্যদিকে, জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্ট তথা রেসিডেন্ট ডক্টরস অ‌্যাসোসিয়েশন (আরডিএ) মিথ‌্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে যে ৫৩ জন জুনিয়র ডাক্তারকে সাসপেন্ড ও বহিষ্কার করেছিল, তারা হাই কোর্টের নির্দেশে আর জি করে ফিরে আসায় প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছেন অনিকেত-কিঞ্জলরা।  স্বাস্থ‌্যসচিবকে ডেপুটেশন দেওয়ার পর এবার ফ্রন্টের বিরুদ্ধে পালটা কর্মসূচিও নিচ্ছে অতনু-সৌরভ-শিরীষরা। ইতিমধ্যে এই রাজ‌্য সরকার বিরোধী জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের পালটা নতুন একটি সংগঠন তৈরি করেছেন তাঁরা। আর জি করের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক‌্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা দলে দলে নয়া এই সংগঠনে নাম নথিভুক্ত করছেন। শীঘ্রই পাল্টা থ্রেট কালচারের অভিযোগ তুলে বড় মাপের আন্দোলনেও নামছেন হাই কোর্টের রায়ে জয়ী হওয়া ৫৩ ডাক্তার। 

দশ দফা দাবি নিয়ে নবান্নে বৈঠকের চার দিন পর শুক্রবার মুখ‌্যসচিব মনোজ পন্থকে সরকারি হাসপাতালগুলির পরিষেবা ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন নিয়ে ছয়টি সুপারিশ-সহ ইমেল করেছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্ট।

এই সুপারিশগুলি হল –১) কেন্দ্রীয়ভাবে হাসপাতালে খালি বেডের সংখ‌্যার উপর নজরদারি করতে হবে।

 ২) ১৪ তারিখের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সেন্ট্রাল রেফারেল সিস্টেমে ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণে ওই সিস্টেমে স্থায়ী ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রাখতে হবে।

৩) রোগীর পরিবারের সুবিধার্থে তথা সাধারণ মানুষের জন‌্য হাসপাতালে পরিকাঠামো সংক্রান্ত স্পষ্ট তথ‌্য প্রতিটি হাসপাতালের সামনে ডিসপ্লে বোর্ডে দিতে হবে। 

৪) দালালরাজ ঠেকাতে প্রতি ঘণ্টায় দ্রুত খালি বেডের পরিসংখ‌্যান প্রকাশ্যে জানাতে হবে।

৫) প্রতি ছয় মাস অন্তর রাজ‌্য সরকারকে হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বেডের সংখ‌্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

 ৬) রেফার করা রোগীর জন‌্য পর্যাপ্ত খালি বেড আছে কি না তা যেমন জানাতে হবে, তেমনই রেফার রোগীর জন‌্য পরবর্তী হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ওষুধ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব‌্যবস্থা রাখা হয়েছে কি না, তা জানাতে হবে।  শুধু তা-ই নয়, কোনও একটি বিষয়ে খামতি থাকলে রোগীর জন‌্য বিকল্প পরিষেবার ব‌্যবস্থা করতে হবে।

ঘূর্ণিঝড় ডানা নিয়ে নজরদারিতে বৃহস্পতিবার যখন মুখ‌্যসচিব নবান্নে ব‌্যস্ত ছিলেন তখনই রাত বারোটার কিছু পরে ইমেলে জুনিয়র ডাক্তাররা এই ছয় দফা পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আন্দোলনকারী ডাক্তাররা জানিয়েছেন, “এই সুপারিশ ঐচ্ছিক নয়, রাজ্য়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির স্বার্থে বাধ‌্যতামূলক।” এই ইস্যুগুলো আলোচনার জন‌্য প্রয়োজনে মুখ‌্যসচিবকে বৈঠকে বসারও প্রস্তাব দিয়েছেন জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের নেতারা। 

সূত্রের খবর, হাই কোর্টে ৫৩ জুনিয়র ডাক্তারের সাসপেনশন ও বহিষ্কার খারিজ করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্ট। বস্তুত সেই কারণেই বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট আইনজীবীকেও দাঁড় করানো হবে, এই ইস্যু সামনে রেখে সংগৃহীত তহবিলের খরচের হিসাবকেও আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement