নব্যেন্দু হাজরা: ব্যক্তি নয়, পার্টিই মুখ্য। পার্টির ঊর্ধ্বে কেউ নন। নির্বাচনে সাধারণ মানুষের কাছে পার্টির কথাই তুলে ধরবেন কমরেডরা। কোনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রচার নয়। বামপন্থীদের সেই পার্টিলাইন আলিমুদ্দিন এযাবৎ মেনে চললেও, অনেক আগেই তা ভাঙা হয়েছে দক্ষিণ ভারতে। সেখানে বামপন্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি। নেতার মুখকে প্রচারে তুলে ধরা হত সেখানে। বঙ্গ সিপিএম এতদিন অবশ্য এতে সায় দেয়নি। বামেদের প্রচারে পার্টির কথাই তুলে ধরা হত এতদিন। তবে এবার বদলে গেল সেই ‘বেঙ্গল লাইন’ও। প্রার্থীর ছবি দেওয়ালে এঁকে প্রচার শুরু করল সিপিএম। যা এককথায় নজিরবিহীন। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্যর প্রচারে দেওয়ালে তাঁর মস্ত ছবি আঁকা হয়েছে। দলের প্রতীক কাস্তে নেমে গিয়েছে ছবির নিচে।
আর তা দেখেই চোখ কপালে তুলছেন পক্ককেশের কমরেডরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রথমে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট, তারপর এই ধরনের প্রচার। দলের হলটা কী? দলেরই এক নেতার কথায়, ‘এর আগে উত্তর কলকাতায় এক প্রার্থীর সমর্থনে হিন্দি গানের চটুল লাইন দিয়ে প্রচার শুরু হয়েছিল। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তারপর সেই হোর্ডিং সরিয়ে দেওয়া হয়। কারণ বং সিপিএম এই ধরনের প্রচারকে সম্মতি দেয় না।’ কিন্তু এবার খানিকটা সেই পথেই হাঁটতে দেখা যাচ্ছে দলীয় বহু কমরেডকে। প্রচারে, দেওয়াল-লিখনে প্রার্থীর মুখ তুলে ধরা হচ্ছে। দলের আরেক বর্ষীয়ান নেতার কথায়, পরিবেশ-পরিস্থিতির চাপে পড়ে অনেক কিছুই তো করতে হয়। সব দল যখন করছে, আমরাই বা কী করে পিছিয়ে থাকি? সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেবকে ফোনে বিষয়টির কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “পোস্টারে, হোর্ডিংয়ে দলের প্রার্থীর ছবি ব্যবহার শুরু হয়েছে। এটা আগে হয়নি। তবে দেওয়াল লিখনও হয়েছে, তা জানা নেই। এবার তো ইভিএমে প্রার্থীর ছবি থাকবে। তাই সাধারণ মানুষ আগে থেকে চিনলে ক্ষতি কী?” তবে কি পার্টি লাইন থেকে সরে আসছে দল? রবীনবাবুর জবাব, “পার্টিলাইন থেকে সরে এসেছে সেটা ঠিক নয়। যে যেভাবে প্রচার করতে চায় করুক না৷” বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। কোথায় হয়েছে, তা দেখে মুছে ফেলা হবে।”
সিপিএম সূত্রে খবর, ২০১৬ সালের বিধানসভাতেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সামনে রেখে ভোটে লড়াই করেছিল বামেরা। কিন্তু বুদ্ধবাবুর মুখ দেওয়ালে এঁকে কখনও প্রচার হয়নি। বা ফ্লেক্স তৈরি হয়নি। যা এবার দেখা যাচ্ছে বামপন্থীদের প্রচারে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারের ক্ষেত্রে প্রতি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীর মুখ ব্যবহার করছে সিপিএম। কমরেডদের কথায়, মান্ধাতার আমলের পার্টিলাইন মেনে প্রচার করতে গেলে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনোই যাবে না। তাই যেখানে মানুষকে যেভাবে প্রার্থীকে চেনানো যায়, সেই চেষ্টাই হচ্ছে। এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘আমাদের তো আর সেলিব্রিটি প্রার্থী নেই। সাধারণ পার্টি কর্মীদের প্রার্থী করা হয়েছে। যাঁরা মানুষের আপদে-বিপদে সব সময়ে থাকেন।’
যদিও বামপন্থীদের এই পালটে যাওয়ার যুক্তিগুলো মানতে রাজি নন শাসকদল তৃণমূলের নেতারা। তাঁদের এক নেতার কথায়, ‘ওদের আর কোনও লাইন আছে নাকি? সব লাইনই তো গিয়েছে। জোটে জট পাকিয়ে ওঁরা এখন কী করবে তাই ভেবে পাচ্ছে না। ওই দলটার কোনও নীতিই নেই।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.