রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির (SSC Scam) অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) গ্রেপ্তার-পর্বে বিরোধী হিসাবে বিজেপির কোনও ভূমিকাই নেই বলে সাফ জানিয়ে দিল বাম শিবির। গোটা লড়াইয়ের কৃতিত্ব শুধুই বামেদের বলে দাবি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে এসএসসি-র চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে বামেরা প্রথম থেকেই পাশে রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের পর এসএসসি-র (SSC) চাকরি প্রার্থীদের ওই আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করতে মাঠে নেমে পড়তে দেখা গিয়েছে গেরুয়া শিবিরকে।
বিজেপির এই সক্রিয়তাকে কটাক্ষ করে রবিবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “বিজেপি শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।” সুজন দাবি করেন, বিজেপি শুধুই প্রচার নিতে চাইছে। আসল লড়াইটা লড়েছে বামেরাই। ব্যাপম কেলেঙ্কারি নিয়েও বিজেপিকে এদিন তীব্র আক্রমণ করেছেন সিপিএমের এই শীর্ষ নেতা। তিনি বলেন, “ব্যাপম কেলেঙ্কারি বিজেপি করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গে এসে ওরা (বিজেপি) সাধু সাজছে।” গোটা বিজেপি দলটাই যখন আন্দোলন বিমুখ হয়ে পড়েছে, তখন হালে পানি পেতেই এসএসসি ইস্যুকে বামেদের থেকে হাইজ্যাক করতে হঠাৎ শনিবার থেকে বিজেপি সক্রিয় হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলও।
সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায় তীব্র আক্রমণের নিশানা করেছেন বিজেপিকে (BJP)। কৌস্তুভের বক্তব্য, “বিজেপির মুখে এসব মানায় নাকি। মধ্যপ্রদেশে ব্যাপম কেলেঙ্কারির কথা ওদের (বিজেপি) মনে রাখা উচিত। ২৯৮টি মেডিক্যাল সিট। দেড় থেকে দু’হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি নেতাদের বাড়ি-বাড়ি টাকা পাওয়া গিয়েছে।” এরপরই এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন কৌস্তুভ। তাঁর অভিযোগ, “এসএসসি দুর্নীতিতে শুভেন্দু অধিকারীও (Suvendu Adhikari) যুক্ত। সেই শুভেন্দু বিজেপির নেতা হয়ে উঠেছেন। শুভেন্দু অধিকারীকে আগে বিরোধী দলনেতা থেকে সরিয়ে বিজেপি থেকে তাড়ানো দরকার।” কৌস্তুভের বক্তব্য, এসএসসি নিয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে, বিজেপি এতদিন কোথায় ছিল। ৩৯৬ দিন ছাত্রছাত্রীরা খোলা আকাশের নিচে বসে আছে। এই আন্দোলন তো বামেরা করেছে। ছেলেমেয়েদের পাশে বামেরা দাঁড়িয়েছে। বিজেপির মুখে এসব মানায় না।’’ ব্যাপম কেলেঙ্কারির নায়ক বিজেপি কোন লজ্জায় এসএসসি নিয়ে বলছে, প্রশ্ন কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়ের। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারির পর শনিবার বেহালায় কৌস্তুভের নেতৃত্বে একটি মিছিলও করেছে সিপিএম। বামেদের আরও বক্তব্য, সারদা-নারদার মতো ইস্যুতে ইদানীং বিজেপিতে ভিড়ে যাওয়া বেশ কয়েকজনের নাম রয়েছে। তাঁরা কেন ছাড় পাচ্ছেন?
সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন এসএফআই (SFI) ও ডিওয়াইএফআই (DYFI) শনিবার মৌলালি থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রবিবারও বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছিল এসএফআই। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, মাঠ—ময়দান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। বুথে বুথে যাদের লোক নেই। গোটা দলটাই আন্দোলন থেকে সরে গিয়েছে। তারা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই হঠাৎ করে শনিবার থেকে সক্রিয়। এসএসসি ইস্যুতে এতদিন সেভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি বিজেপিকে। হাতেগোনা কয়েকবার নামকাওয়াস্তে তারা এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের ধরনামঞ্চে গিয়েছে। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হতেই এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের ধরনামঞ্চে ফায়দা নিতে ছুটেছেন বিজেপি নেতারা।
ইস্যুটি হাইজ্যাক করতে সকালেই আসরে নেমে পড়ে বিজেপি। দিল্লির পার্টি অফিসে প্রেস কনফারেন্স করে বিজেপি নেতৃত্ব। আসরে নেমে পড়েন কলকাতায় থাকা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দলীয় বৈঠকে দাবি করে বসেন, এসব বিজেপির আন্দোলনের জন্য হয়েছে। সুকান্তকে সিপিএম নেতাদের পালটা তোপ, ব্যাপম কেলেঙ্কারির নায়ক বিজেপির মুখে এসব মানায় না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.