বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত ও কলহার মুখোপাধ্যায়: ধর্মাচারণ কদাপি নয়। তবে সামাজিক উৎসবে যোগদান করতে হবে। এ সংক্রান্ত কড়া নির্দেশিকা রয়েছে সিপিএমের। অবশ্য এ নির্দেশকে আমল না দিয়েও দিব্যি টিকে থাকার হাতে গরম উদাহরণ রয়েছে পার্টিতে। সেই ফাঁক গলেই এবার আরেকটি পুজো কমিটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির সিপিএমের বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য। শুধু উপস্থিত নন, একেবারে দুর্গা মূর্তির সামনে গিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করতেও দেখা গেল তাঁকে। যা নিয়ে তাঁর এলাকার কমরেডরা প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না।
রবিবারের বরানগর ন’পাড়া দাদা-ভাই সংঘের পুজো মণ্ডপ। পুজোর উদ্বোধন করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের আরেক মন্ত্রী তাপস রায় ও সাংসদ সৌগত রায়ও। তন্ময়বাবু জানিয়েছেন, “আমন্ত্রিত ছিলেন তিনিও।” ধর্মাচরণে যোগদান নিয়ে সিপিএমে বিতর্ক কম দিনের নয়। প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী স্বয়ং তারাপীঠে পুজো দিয়ে এই বিতর্কে ইন্ধন দেওয়ার পর তা মাথাচাড়া দেয়। তবে প্রবীণ এই নেতাকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করা হয়েছিল। তারপর সিপিএমের আর এক প্রবীণ মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার হজে যাওয়া নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়। তাঁকেও প্রকাশ্যে ভর্ৎসনার সিদ্ধান্ত নেয় পার্টি। এরকম ঘটনা আরও ঘটেছে। সাম্প্রতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়ের পুজো উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে। তবে ইদানিং সংগঠনের দুর্বলতার কারণে এসব নিয়ে আর বিশেষ মাথা ঘামাননি কমরেডরা। মানসবাবুর বিরুদ্ধে কার্যত কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বা ন্যূনতম ভর্ৎসনা না করে তাঁকে একপ্রকার ছাড়ই দিয়ে দেয় পার্টি। এই ঘটনাকে পার্টিলাইন অবমাননা হিসেবেই দেখেছিলেন সিপিএমের অনেক নেতা। তবে রাজ্যকমিটি মানসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একপ্রকার সাহস পায়নি বলেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত।
সেই ফাঁক গলেই কি পুজো উদ্বোধনে প্রদীপ প্রজ্বলন করলেন তন্ময় ভট্টাচার্য? এক জেলা নেতার কথায়, পার্টির নড়বড়ে পরিস্থিতির কারণেই এই স্পর্ধা দেখাতে সাহস পেয়েছেন তন্ময়। আর তন্ময়বাবু কী বলছেন?তিনি অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, “এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন।” তাঁর বক্তব্য, “পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অঞ্জন পাল আমার ছোটবেলার বন্ধু। তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাই এসেছি।” আর তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে উদ্বোধন–মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া প্রসঙ্গে সিপিএম বিধায়ক বলেছেন, “আগের বছর প্রণব মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন। আমি এসেছিলাম। এবার ফিরহাদ হাকিম উদ্বোধন করেছেন। আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে এসেছিলাম।” সরকারিভাবে সিপিএম এখনও এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি। তবে পুজো মিটে যাওয়ার পর পার্টির অন্দরে এই প্রসঙ্গে আলোচনা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জেলার এক নেতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.