রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: না জানিয়ে পার্টির প্রকাশ হওয়া একটি বইয়ের প্রচ্ছদে এক মহিলার ছবি ব্যবহার করে প্রবলভাবে সমালোচিত হল সিপিএম। কমিউনিস্ট পার্টি করেন না, কিন্তু আর জি কর আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ের প্রচ্ছদে সেই মহিলার ছবি প্রকাশ করেছে সিপিএম। যা নিয়ে নিজের ফেসবুকে সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হলেন নেহা চক্রবর্তী নামে ওই মহিলা। যিনি পেশায় একজন ডিজিট্যাল ক্রিয়েটর।
আর জি কর ইস্যুতে ডাক্তার থেকে নাগরিক সমাজের আন্দোলনকে প্রথম থেকেই সিপিএম ‘হাইজ্যাক’ করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে বলে নানা মহলে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। অরাজনৈতিক মিছিলের পিছনেও বারেবারে দেখা যাচ্ছে সিপিএম নেতা, কর্মীদের। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া সিপিএমের ব্যানারে মিছিলে সাধারণ মানুষ আসে না, তাই অরাজনৈতিক আন্দোলের ব্যানারকে তারা ব্যবহার করছে। এবার নিজের মতো অরাজনৈতিক আন্দোলনে নামা কোনও আন্দোলনকারীর ছবিকেও পার্টির প্রকাশিত বইয়ে প্রচ্ছদে বা পোস্টারে ব্যবহারের নজিরও তৈরি করল সিপিএম। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সিপিএমের বিরুদ্ধে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
সিপিএমের তরফে সোশাল মিডিয়ায় এই বইটির প্রকাশ নিয়ে আগাম প্রচারে লোখা রয়েছে, গোটা রাজ্যজুড়ে মেয়েদের অভূতপূর্ব প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির নতুন প্রকাশনা ‘মেয়েদের লড়াই’। আজ থেকে বইটি পাওয়া যাবে সেটাও জানানো হয়েছে সিপিএমের তরফে। আর এটা সামনে আসতেই অনুমতি ছাড়া যে আন্দোলনকারীর ছবি পার্টির এই বইয়ের প্রচ্ছদে ব্যবহার করেছে সিপিএম, সেই নেহা চক্রবর্তী প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সিপিএম তিনি করেন না, একথা জানিয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, ‘‘আমি সিপিএম পার্টির সঙ্গে যুক্ত নই, এটা সকলের কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার প্রথমেই। সিপিএমের প্রকাশনায় আমার ছবি দিয়েছে। দিতেই পারেন। কারণ আন্দোলনের যে কোনো ছবি আমি ‘own’ করি না। সেটা আমার ছবি হলেও। তবে উল্লেখ্য, পার্টির লোকজন আমাকে আমার ছবির বিষয় একটুও ‘অবগত’ অবধি করার প্রয়োজন বোধ করেননি। যে মিছিলের ছবি তারা ব্যবহার করেছেন, সেটাও সিপিএমের মিছিল ছিল না, এটাও জানা দরকার। ফলত আমার ও আমার পরিচিত, অপরিচিতদের বইয়ের প্রচ্ছদের হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস দেখে ‘হঠাৎ চমকের’ মতো বিষয়টা হয়েছে। একে একে লোকজনকে বোঝাতে হচ্ছে যে আন্দোলন আমরা করি বা করছি দীর্ঘদিন ধরে সেটায় কোনও পার্টিরই ব্যাক সাপোর্ট নেই।’’
নেহা চক্রবর্তীর এই ফেসবুক পোস্টকে শেয়ার করে সিপিএমকে তুলোধনা করেছেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। কুণাল লিখেছেন, ‘‘এই যে সিপিএমের কিছু কৃমি, এটা পড়ুন। সকলের অধিকার নিজের নিজের মতো আন্দোলনের। কিন্তু, এখানেও সিপিএমের এই সব কীর্তি!!!! এদের প্রকাশনা সংশোধন করা উচিত।’’ সিপিএমের এহেন কাজকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী। অরূপের বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা এতটাই প্রকাশ্যে যে, এখন কলতান দাশগুপ্তের ছবি দিয়ে ফ্লেক্স টাঙিয়ে আর জি কর ইস্যুতে মিছিল বের করতে গেলে নাগরিক সমাজের নাম দিতে হয়। নিজেদের দলীয় নামে মিছিল বের করতে পারে না। আবার পোস্টারে নেহা চক্রবর্তীর মতো রাজনীতির বাইরের লোকেদের ছবি দিতে হয়। কারণ, সিপিএমের মুখগুলো মানুষের কাছে এতটাই প্রত্যাখ্যাত ও ধিক্কৃত যে তাদের মুখ ও পতাকা দেখলে সেই আন্দোলন কর্মসূচিতে মানুষ আসে না। সামগ্রিকভাবে অন্তসারশূণ্য সিপিএম রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া।’’
প্রসঙ্গত, আর জি কর ইস্যুতে মঙ্গলবার কলেজ স্কোয়ার থেকে রবীন্দ্রসদন পর্যন্ত চিকিৎসকদের মিছিলেরও দখল নিয়েছিল সিপিএমের পরিচিত নেতা ও বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের ক্যাডাররা। সঙ্গে ছিল সিপিএমের জোটসঙ্গী কংগ্রেস ও আইএসএফও। ডাক্তার ও নাগরিক সমাজের নামে এই মিছিল হলেও আসলে তা হয়ে গিয়েছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক। নির্বাচনী ময়দানে সিপিএম প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে নামা পরিচিত ডাক্তার-নেতা থেকে শুরু করে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, প্রাক্তন মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র, আরএসপির মনোজ ভট্টাচার্যরা ছিলেন মিছিলের একেবারে সামনের সারিতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.