বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: চিন বিপ্লবের সময় দলের সদর দপ্তরে কামান দাগতে বলেছিলেন মাও সে তুং। বাংলায় বিধানসভা ভোটে (WB Assembly Polls 2021) বিপর্যয়ের পর আলিমুদ্দিনকে লক্ষ্য করে সেই ‘কামান দেগে’ বসলেন প্রবীণ সিপিএম (CPM) নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় (Kanti Ganguly)। রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে শীর্ষ নেতাদের অপসারণ চাইলেন তিনি। একইসঙ্গে দলের যাবতীয় কমিটি ভেঙে দেওয়ার দাবিও তুলেছেন রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়ক। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান দাপুটে নেতার এহেন পত্রাঘাতে কাঁপন ধরেছে আলিমুদ্দিনের অন্দরমহলে।
মান ভাঙাতে মঙ্গলবার প্রাক্তন মন্ত্রীকে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠিয়েছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা। সূত্রের খবর, আলোচনাতেও কান্তিবাবুর ‘বিদ্রোহে’র আগুনে জল ঢালা সম্ভব না হলে পালটা আক্রমণের পথে যাওয়া হবে। সেজন্য রায়দিঘির প্রাক্তন বিধায়কের বিরুদ্ধে জমা হওয়া অভিযোগের ফাইল ধুলো ঝেড়ে নতুন করে খোলার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
এর সূত্রপাত ২ মে। বাংলায় বামেদের বিপর্যয়ের দিন। ভরাডুবির পরেই পার্টির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তোপ দেগেছিলেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। ক্ষোভ উগড়ে দেন সংযুক্ত মোর্চার অপর দুই সঙ্গী কংগ্রেস (Congress) এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (Indian Secular Front) বিরুদ্ধে। বর্ষীয়ান এই নেতার নিশানায় বিদ্ধ হন আলিমুদ্দিনের কর্তারাও। জোটের প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে তোলেন হাজারও প্রশ্ন। সূত্রের খবর, জেলা পার্টির সভাতেও নিজের ক্ষোভ চেপে রাখেননি। আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুদের। বিতর্কের জল গড়ায় রাজ্য কমিটির বৈঠক পর্যন্ত। রাজ্য সম্পাদক ও বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগেন। সূর্যকান্ত মিশ্রর উদ্দেশে সকলের সামনেই কটূক্তি করেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়দানে অবতীর্ণ হন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী। তাঁর সঙ্গেও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বলে সূত্রের খবর।
এরপরই নিজের মূল্যায়ন লিখিত আকারে আলিমুদ্দিনে (Alimuddin) পাঠান কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। ভোটে কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে বামেদের জোটকে অবাস্তব ও দায়িত্বজ্ঞানহীন অ্যাখ্যা দেন তিনি। সেইসঙ্গে জোট ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবি ও সর্বস্তরের কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথাও চিঠিতে লেখেন বলে জানা গিয়েছে। এই ‘পত্রবোমা’র পর দল বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে নেতৃত্ব। যদিও প্রকাশ্যে চিঠির কথা স্বীকার করেননি প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী। তিনি কোনও চিঠি দেননি বলে জানান। তবে ইদানিংকালে তাঁর আচরণ ও কথাবার্তা দল ছাড়ার ইঙ্গিত বলেই মনে করছে পার্টির নেতারা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপর্যয়ের কারণ ও ভবিষ্যতে পথ চলার পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। সেখানে কান্তিবাবু বর্ষীয়ান নেতা। তিনি তো চিঠি দিতেই পারেন। এমনই সাফাই পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.