বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: প্রবাদের হাবুল যে সবসময় ঠেকেও শেখে না, তা আরও একবার প্রমাণ করল বঙ্গ সিপিএম। ৫০ বছর আগে, সাতের দশকের উত্তাল সময়ে অতি বাম নকশাল ও দক্ষিণপন্থী কংগ্রেসকে একই বন্ধনীতে রেখে ‘কংশাল’ নামকরণ করেছিলেন সুন্দরাইয়া, নাম্বুদ্রিপাদ, প্রমোদ দাশগুপ্তরা। অর্ধশতক পর ২০২১-এ সেই একই ভুল করা হয়েছে বলে খুল্লমখুল্লা স্বীকার করে নিচ্ছেন আজকের সীতারাম ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত মিশ্ররা। বলছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) ও সাম্প্রদায়িক বিজেপির (BJP) চরিত্রবিচারে ভুল করেছিলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুজফফর আহমেদের জন্মদিনের মঞ্চে এই প্রসঙ্গে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, “বিজেপি ও তৃণমূলকে একই চোখে আমরা দেখি না। ‘বিজেমূল’ শব্দবন্ধটা ভুল ছিল।” ভুলের দায় স্বীকারের পাশাপাশি লক্ষ্যনীয়ভাবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি বিরোধী জোটপ্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি। আর তাতেই রাজনৈতিক মহলে চর্চা আরও জোরদার হয়েছে।
একেই বোধহয় বলে বিলম্বিত বোধোদয়। ঠকে শিখল আলিমুদ্দিন। এবার ঢাকঢাক-গুড়গুড় নয়। বিজেপি ও তৃণমূলকে একই সারিতে বসিয়ে ‘বিজেমূল’ বলাটা ভুল হয়েছিল। প্রকাশ্যে ঘরভরতি লোকের সামনে তা স্বীকার করে নিলেন আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজাররা। তবে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সিপিএমের (CPM) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিমরা। যেভাবে সাতের দশকে জরুরি অবস্থার সময় কংগ্রেস ও নকশালদের এক করে বামেরা ‘কংশাল’ তকমা দিয়েছিল, তেমনই এবার বিজেপি ও তৃণমূলকে একই বন্ধনীতে ‘বিজেমূল’ বলা হয়েছে। তবে দুটো দল যে আলাদা তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক। তিনি বলেন, “বিজেপি ও তৃণমূলকে আমরা কখনই এক করে দেখিনি। কখনও এক করা হয়নি।”
কিন্তু পাশাপাশি তাঁরা এই অভিযোগেও অনড় যে কেন্দ্রের শাসকদলকে রাজ্যে ডেকে আনা হয়েছে এবং সংঘ পরিবারকে শাখা বিস্তারে সাহায্য করেছে রাজ্যের শাসকদল। তাই ‘বিজেমূল’ বলা হয়েছে। যেভাবে ষাটের দশকে কংগ্রেসিরা নকশালদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সিপিএমের নেতা-কর্মীদের হত্যা করত, এবার তেমন বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে বলে যুক্তি সাজান সূর্যকান্ত মিশ্র। তবে একুশের নির্বাচনে ভরাডুবি থেকে শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল সম্পর্কে অনেকটাই নরম মনোভাব নিতে দেখা যাচ্ছে আলিমুদ্দিনকে।
সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিজেপি বিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করেন পার্টি রাজ্য সম্পাদক। নিজেদের ভরাডুবির জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করান সিপিএম নেতৃত্বে। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত অনেকেই ‘বিজেমূল’ তত্ত্বের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ আলিমুদ্দিনের। কঠিন পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। সেইসঙ্গে এদিনও সিপিআইএমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি সিপিএম নেতৃত্ব। দীপঙ্করকে ‘বিপ্লবী’ বলে কটাক্ষ করেন সেলিম। তিনি বলেন, “অনেক বিপ্লবী ভাবছেন এবার সিপিএমের শিক্ষা হয়েছে। সিপিএম বুঝতে পেরেছে বিজেপি ও তৃণমূলের আলাদা।” দুটো দল যে আলাদা তা আগেই তাঁদের জানা ছিল বলেও জানান সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.