বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: গণশক্তি পত্রিকায় চিনের পক্ষ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, এই অভিযোগে দুপুরে বিজেপি মহিলা মোর্চার তরফে গণশক্তি ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে ধুন্ধুমার হয়ে উঠেছিল এলাকা। এই ঘটনার প্রায় ঘণ্টা তিনেক পর বিবৃতি দিল সিপিএম রাজ্য কমিটি। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সরাসরি অভিযোগ তুললেন, প্রতিবেদনের ওই অংশটিকে বিকৃত করে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে। এটি অবশ্য শুধু আজকের ব্যাপার নয়। বিজেপি কর্মীরা যে সিপিএমের নানা কর্মসূচি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে, সেই অভিযোগ তুলে এবং প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৯ তারিখ গণশক্তিতেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতেও গেরুয়া শিবিরের ভূমিকার নিন্দা করা হয়েছে।
শনিবার বিকেল নাগাদ বিজেপি মহিলা মোর্চার কর্মসূচি নিয়ে বিবৃতি দেয় আলিমুদ্দিন। তাতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ”গণশক্তি পত্রিকার একটি সংবাদকে বিকৃত করে গত দু’দিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিজেপি এবং আরএসএসের আইটি সেল। লাদাখে ভারত-চিন সংঘাতের ঘটনার সংবাদের একটি ছোট অংশকে তুলে ধরে বিকৃত প্রচারের ভিত্তিতে বিজেপির মহিলা মোর্চা শনিবার গণশক্তি পত্রিকা দপ্তরের বিপরীতে জোড়া গির্জার সামনে বিক্ষোভের নামে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ এই বিশৃঙ্খলা চলার পরে পুলিশ অবশ্য বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করেছে। একটি ফেক নিউজ বানিয়ে সংবাদপত্র দপ্তরের সামনে বিজেপির এই ঘৃণ্য কৌশলের তীব্র নিন্দা করছি। এটাই এদের ফ্যাসিস্ট চরিত্র। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে, গণশক্তি সবসময়েই সেই ভূমিকা পালন করে চলেছে।”
গত ১৭ তারিখ অর্থাৎ লাদাখ সীমান্তে ভারত-চিন সেনার সংঘর্ষের পরেরদিন গণশক্তিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সেদিনকার ঘটনারই পুঙ্খানুপুঙ্খ উল্লেখ ছিল। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া গণশক্তির ওই প্রতিবেদন সংক্রান্ত একটি পোস্টে দেখা যায়, একটি অংশ পুরোপুরি চিনের সেনাদের আক্রমণে ভারতীয়রাই উসকানি দিয়েছে – প্রতিবেদনটির ছত্রে ছত্রে এমনই লেখা। যা ঘিরে তুমুল হইচই শুরু হয়ে যায়। এভাবে একটি অংশ বিকৃত করার দায় বিজেপির আইটি সেলের উপর চাপিয়ে গণশক্তি ১৯ তারিখ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা করা হয়। সিপিএম চিনের দালাল, এই অভিযোগেও সরব হয় বিজেপি। এই সংক্রান্ত প্রচার যাতে জনগণের মনে প্রভাব না ফেলে, সে কারণে পলিটবুরো এবং সিপিএম রাজ্য কমিটি আলাদা বিবৃতি দিয়ে জানায়, সিপিএম কখনওই চিনপন্থী নয়।
এরপরও শনিবার বিজেপি মহিলা মোর্চার ওই একই অভিযোগে কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি হওয়ায় বাধ্য হয়েই বিবৃতি দিতে হয় আলিমুদ্দিনকে। সূর্যকান্ত মিশ্রের সেই দীর্ঘ বিবৃতিতে বিজেপি এবং আরএসএসকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিনের সংবাদপত্র হিসেবে গণশক্তিও যে নিজের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে, সেকথাও জানিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই চিন ইস্যু নিয়ে বাম এবং ডানপন্থীদের সরাসরি যে সংঘাতের সূচনা হল, সেই জল বহুদূর গড়াবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.