বুদ্ধদেবের ছবি নিয়ে ব্রিগেডে কর্মীরা। ছবি: সুমন দাস।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেষবার ব্রিগেডে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ভগ্ন শরীর নিয়েই কোনওক্রমে ব্রিগেড (Brigade) প্যারেড গ্রাউন্ড পর্যন্ত এসেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, খারাপ সময়ে যদি একবার মঞ্চে গিয়ে দলীয় কর্মীদের পাশে থাকার বার্তাটা দেওয়া যায়। নাহ, শেষপর্যন্ত পারেননি। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ব্রিগেডের মঞ্চে না উঠেই ফিরতে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে (Buddhadeb Bhattacharjee)। কিন্তু, বুদ্ধবাবু ওই যে ১২ মিনিট ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ছিলেন, তাতেই হয়তো বহু বামপন্থী কর্মী হারানো আত্মবিশ্বাসের অনেকটা ফিরে পেয়েছিলেন।
২০২৪ সাল। বাম (CPM) ছাত্র-যুবদের ব্রিগেড (Brigade Rally)। গুরুতর অসুস্থ বুদ্ধবাবু, সেবারও মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। গত বছরের ব্রিগেড সমাবেশের একদিন আগে বুদ্ধদেবের বাড়ি গিয়ে তাঁর বার্তা নিয়ে আসেন বাম-যুব সংগঠনের নেতারা। ব্রিগেডের ‘ক্যাপ্টেন’ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, ‘‘ভালো ব্রিগেড হবে। বড় ব্রিগেড হবে।’’ এ বছর বুদ্ধবাবুর সেই বার্তাটুকুও পাওয়া যাবে না। বুদ্ধবাবু আর নেই। তাঁর প্রয়াণের পর এই প্রথম এত বড় সমাবেশ করছে বামেরা। কিন্তু বুদ্ধবাবুর শূন্যতা আজও যেন কুরে কুরে খাচ্ছে বামপন্থীদের।
এক সংবাদমাধ্যমকে প্রয়াত বুদ্ধবাবুর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতা যে পর্যায়েই হোক ব্রিগেড কখনও মিস করতেন না বুদ্ধবাবু। উনিশের পর আর কোনও ব্রিগেডে সশরীরে হাজির থাকতে পারেননি তিনি। কিন্তু ব্রিগেডের দিনগুলিতে অস্থির হয়ে পড়তেন। নজর রাখতেন টিভির পর্দায়। এক মুহূর্তও মিস করা যাবে না। কত কর্মী এলেন, কেমন ভিড় হল, নেতারা কী বললেন সবটাই নাকি খবর নিতেন। এমনকী ব্রিগেডের দিনগুলিতে দুপুরের খাওয়াটাও হত না।
বুদ্ধবাবু জীবিত অবস্থায় কোনও ব্রিগেড মিস না করলেও এবারের ব্রিগেড ‘মিস’ করছে বুদ্ধবাবুকে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কর্মীদের অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে বুদ্ধ-নাম। কেউ কেউ সঙ্গে এনেছেন বুদ্ধবাবুর ছবি। পুরনো কর্মীদের কাউকে কাউকে ব্রিগেডে বুদ্ধবাবুর জ্বালাময়ী ভাষণের স্মৃতিচারণ করতেও দেখা যাচ্ছে। আসলে, আজও অনেক বামপন্থী বিশ্বাস করেন, সাদা চুলের ওই ভদ্রলোক যদি ময়দানে থাকতেন, হয়তো ভোটের হিসেবে শূন্য হয়ে যাওয়া বামেরা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারত। আসলে বুদ্ধবাবু রাজনীতির সক্রিয় আঙিনা থেকে যত দূরে সরে গিয়েছেন, ততই বঙ্গ রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়েছে বামেরা (CPM)।
বামপন্থীদের আক্ষেপ, বুদ্ধবাবুর পর্যায়ের নেতা আর বামপন্থীদের হাতে নেই। এবারের ব্রিগেডের আয়োজক দলের শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর সংগঠন। সমাবেশের বক্তা তালিকায় রয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ছাড়াও অনাদি সাহু, নিরাপদ সর্দার, বন্যা টুডু, অমল হালদার ও সুখরঞ্জন দে প্রমুখ পার্টির শ্রমিক, কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের নেতারা। এঁদের মধ্যে কে-ই বা মঞ্চে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে বলবেন, ‘এ লড়াই লড়তে হবে, এ লড়াই জিততে হবে।’ উত্তর খুঁজে চলেছে ব্রিগেড।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.