সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এসএসসিতে ২৬ হাজার নিয়োগ মামলায় প্যানেল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষার সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর এহেন আবেদনের জেরে পার্টির মধ্যেই বিরোধিতার মুখে পড়লেন বিকাশবাবু।
এসএসসি-র ২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থীর প্যানেল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সোমবার সুপ্রিম কোর্টে মন্তব্য করেছেন সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিকাশবাবুর এই মন্তব্যের বিরোধিতায় সিপিএমেরই ছাত্র সংগঠন এসএফআই থেকে শুরু করে পার্টির শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ। বিকাশবাবুর এই মন্তব্য নিয়ে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে-র বক্তব্য, ‘‘২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থীর সম্পর্কে আমাদের মনোভাব এটাই যে, খুব স্পষ্টভাবে যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করতে হবে। যারা যোগ্যতার বিচারে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি চলে যাবে, এটা হতে পারে না। প্যানেল বাতিল করা মানে এই প্যানেল আবার প্রস্তুত করতে দু-তিনবছর সময় লেগে যাবে। তা হলে স্কুলগুলি শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ে থাকবে।’’ দেবাঞ্জনের দাবি, ‘‘যাঁরা যোগ্য তাঁদের চাকরি কাড়া যাবে না, যাঁরা অযোগ্য, তাঁদের আবার পরীক্ষা নেওয়া হোক।’’
উল্লেখ্য, আরও বেশি শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে বলে দাবি করছে এসএফআই। আর তাদের পার্টির নেতা চাকরি প্রার্থীদের প্যানেল বাতিলের দাবি করছেন। এর বিপক্ষে থাকা এসএফআই নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আইনজীবী হিসাবে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। কিন্তু সংগঠনগতভাবে প্যানেল বাতিলের পক্ষে নয় এসএফআই। সিপিএমের প্রাক্তন ছাত্রনেতা তথা বর্তমানে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বিরোধিতা করেছেন পুরো প্যানেল বাতিলের। বিকাশবাবুর মন্তব্যকে সমর্থন করছেন না সুজনও। সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এনেছিলেন বিকাশ ভট্টাচার্যই। কিন্তু কারও যোগ্য চাকরি বাতিল করা যাবে না। পরীক্ষা দিয়ে, লেখাপড়া করে পাস করে নিজের যোগ্যতায় যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, দুর্নীতির চাকরি হিসাবে তাঁদের গণ্য করা যাবে না।’’ আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক থাকতে পারে। শেষে কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু যোগ্য-ন্যায্য কারও চাকরি যেন খারিজ না হয়, দাবি সুজনের।
এদিকে, বিকাশের মন্তব্যের বিরোধিতা করে বিপক্ষে মত দিয়েছে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ। মঙ্গলবার এ প্রসঙ্গে এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেছেন, ‘‘পুরো ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পক্ষে আমরা নই। কারণ, এই প্যানেলে বহু যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। যাঁরা আগে চাকরি করতেন, কিন্তু উচ্চ বেতনের জন্য তাঁরা ফের এই পরীক্ষাটা দিয়েছিলেন। তাছাড়া কাছাকাছি স্কুলে আসার জন্য অনেকেই পরীক্ষা দিয়েছেন। ফলে সবাই যে অযোগ্য, এটা আমরা বলতে পারি না। যোগ্যদের চাকরি বহাল রাখার জন্য আমরা সুপ্রিম কোর্টে দু’জন নাম করা আইনজীবীও দিয়েছি।’’
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ার জন্য যোগ্য প্রার্থীদের যাবতীয় তথ্য জোগাড়ের জন্য এবিটিএ তিনদিন ধরে ক্যাম্পও করেছিল। বিভিন্ন জেলার চাকরিপ্রার্থীরা সেই ক্যাম্পে এসে তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়েছিলেন। এদিকে, কলকাতার ধর্মতলায় অবস্থানরত চাকরিপ্রার্থী, যাঁরা এই বিতর্কিত প্যানেলে নাম থাকায় চাকরি করছেন, তাঁরাও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের মন্তব্য নিয়ে। ইতিমধ্যেই তাঁরা ৬বছর ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। চাকরি নিশ্চিত করার দাবি নিয়ে তাঁরা অবস্থান করছেন। অবস্থানরত এক শিক্ষক বলেন, কেন তাঁরা ফের পরীক্ষায় বসবেন। একটা পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে পাস করে যোগ্যতার বিচারে তবেই তো চাকরি পেয়েছেন। তার পরও যে বিভিন্ন ভেরিফিকেশন হয়েছে, সেখানেও ডকুমেন্ট দিয়েছেন। বিকাশবাবুকে তীব্র আক্রমণ করে এক চাকরিপ্রার্থীর প্রশ্ন, যিনি নতুন করে পরীক্ষায় বসার কথা বলেছেন, তাঁকে নতুন করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বললে তিনি কি পাস করতে পারবেন?
উল্লেখ্য, সোমবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানতে চায় ২০১৬ সালের নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্য-অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথকীকরণ সম্ভব কি না। জবাবে সরাসরি অসম্ভব বলে জানিয়ে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তোলেন মূল মামলাকারীদের তরফে বিভিন্ন আইনজীবী। এত বড় নিয়োগপ্রক্রিয়া আট বছর বাদে কীভাবে সম্ভব, উঠছে সেই প্রশ্ন। আদালতও পর্যবেক্ষণে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, এ তো বিশাল বড় কাজ। জবাবে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর যুক্তি ছিল, প্রত্যেক আবেদনকারী নন, শুধু যাঁরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের নিয়েই ফের হোক পরীক্ষা। বিকাশ ভট্টাচার্যদের এই প্রস্তাবে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ বঞ্চিত ও আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের অধিকাংশই। তাঁদের বক্তব্য, বিচারপ্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে দিচ্ছেন এই আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.