ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: আট বছরে আয় তলানিতে ঠেকেছে। কিন্তু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরচ। তাই ব্যয় সামাল দিতে যেমন গাড়ি বিক্রি করছে সিপিএম, তেমনই গণ সংগ্রহ ও শাখা সংগঠনগুলির থেকেও আয় বাড়ানোর উপর সেপ্টেম্বর থেকেই জোর দিচ্ছে আলিমুদ্দিন নেতৃত্ব।
কেরল ছাড়া প্রায় সব রাজ্যেই সিপিএমের আয় একধাক্কায় অনেকটাই কমেছে। একটা সময় ছিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপরই সিপিএমের খরচ অনেকটা নির্ভর করত। সুখের সেই সময় অস্তমিত। অবস্থা এমন জায়গায় এসেছে যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রাপ্ত আয় অর্ধেকে এসে ঠেকেছে। একই অবস্থা আগরতলারও। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রস্তাব মেনে আয় বাড়ানো ও খরচে রাশ টানতে একগুচ্ছ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে আলিমুদ্দিন। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলা কমিটিকে গাড়ির ব্যবহার কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তেমনই অতিরিক্ত গাড়ি বিক্রি করতে হবে। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ, জেলা সম্পাদক, প্রবীণ পার্টি সদস্য এবং প্রাক্তন সাংসদরাই গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন। খুব প্রয়োজনে অ্যাপ ক্যাব ব্যবহার করতে হবে। সিপিএম সূত্রে খবর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় সিপিএম জেলা কমিটির নামে যথাক্রমে ছয়টি ও চারটি গাড়ি রয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদসে্যর কথায়,“উত্তর চব্বিশ পরগনায় জেলা সম্পাদক এবং গৌতম দেব ছাড়া আর কেউ গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না। জরুরি প্রয়োজন আগে জানাতে হবে। জেলা পার্টি থেকে অ্যাপ ক্যাবের ব্যবস্থা করা হবে।”
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী প্রথম থেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। কলকাতা জেলা কমিটির ১৭টি গাড়ি। তারমধ্যে তিনটি পার্টির। এক সদস্যের কথায়, ইতিমধ্যেই সাতটি গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একটি গাড়ি বিক্রি করা হয়েছে। তিনটি গাড়ি রেখে বাকিগুলিও ছেড়ে দেওয়া হবে। লোকাল ও জোনাল কমিটি বন্ধ করার পর পুরনো পার্টি অফিসগুলোও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর দুই বর্ধমান, উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলা কমিটিও ইতিমধে্যই গাড়ির ব্যবহার কমিয়েছে। জেলা সম্পাদক ও প্রবীণ পার্টি সদস্য ছাড়া বাকিদের গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গাড়ি, বাড়ির ব্যবহার কমানোই নয়। কলকাতা-সহ সব জেলাতেই ফোনের ব্যবহারও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেছেন, জেলা কমিটি ছাড়া এরিয়া ও শাখা কমিটিগুলির টেলিফোন বন্ধ করা হয়েছে। এখন সবার হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন। তাই অহেতুক ল্যান্ড ফোন রাখা বাহুল্যমাত্র। আবার আয় বাড়াতে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা গণসংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করবে আলিমুদ্দিন নেতৃত্ব। সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুর মতো শীর্ষনেতা থেকে শাখা কমিটির সদস্যরাও এই কর্মসূচিতে শামিল হবেন। রাজ্য সিপিএমের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসের মধ্যে প্রতিটি জেলা কমিটিকে অন্তত ১২ লক্ষ টাকা করে রাজ্য তহবিলে জমা দিতে হবে। এই অর্থের একটি বড় অংশ কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা করতে হবে। বাকি অংশ পার্টির সর্বক্ষণের কর্মীদের ভাতা বা ‘ওয়েজ’এবং বাকি অংশ আইনি খরচ ও মৃত সদস্যদের পরিবারের জন্য খরচ করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.