স্টাফ রিপোর্টার: সিপিএমের (CPM) কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুর সংগঠনের ডাকে আজ, রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ (Brigade Rally)। যদিও মাঠ ভরানোর মরিয়া লক্ষ্যে ছাত্র-যুব সংগঠন-সহ পুরো পার্টিই নেমেছে ছাব্বিশের ভোটের আজকের সমাবেশে শক্তি দেখাতে। এর আগেও ব্রিগেডে লোক এনেছে সিপিএম। কিন্তু ভোট কোথায়? চলে যাওয়া ভোট কি ফিরবে? ৫ শতাংশে নেমে যাওয়া শূন্যের রেকর্ড করা সিপিএম ঘুরে দাঁড়াতে কি কোনও বাড়তি অক্সিজেন পাবে আজকের সমাবেশ থেকে? কতটা ভরবে ব্রিগেড? এসব নিয়ে রাজনৈতিক চর্চার পাশাপাশি ও নানা প্রশ্নের মধ্যেই আজ ‘সিপিএমের লোক আছে ভোট নেই’ বাংলায় এই চালু কথা বদলাবে কি না আগামী ছাব্বিশের নির্বাচনে তারই যেন পরীক্ষা আজ আলিমুদ্দিনের কাছে। অন্তত সিপিএমের শীর্ষনেতারা সেটাই ভাবছেন।
রবিবার দুপুরে সমাবেশে প্রধান মুখ হতে চলেছেন এসব সংগঠনের নেতানেত্রীরা, যাঁরা তেমন জনপ্রিয় নন। বন্যা টুডু থেকে নিরাপদ সর্দার, অনাদি সাহুরা বক্তব্য রাখবেন। পরিচিত বক্তা বলতে একমাত্র সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এছাড়া সদ্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া সিপিএম যুব সংগঠন ডিওযাই এফআইয়ের-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এবার বক্তব্য রাখবেন কি না, তা নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত এখনও। চমক দিতে তাঁকে শেষবেলায় তোলা হতে পারে মঞ্চে। ব্রিগেডের প্রস্তুতি একেবারে শেষ পর্যায়ে। শনিবার বিকেলে তা দেখে এসেছেন দলের শীর্ষনেতারা। ব্রিগেডের মঞ্চ দেখলেই স্পষ্ট যে এবারে সিপিএমের মঞ্চের নকশা একটু বদলেছে।
ভিক্টোরিয়ার দিকে আগে যেখানে মঞ্চ হত, সেখান থেকে ৩০০ মিটার এগিয়ে করা হয়েছে। অর্থাৎ, লম্বায় কিছুটা কমেছে জনসভাস্থলের আয়তন। আর চব্বিশে ডিওয়াইএফআইয়ের মঞ্চ হয়েছিল পার্ক স্ট্রিটের দিকে মাঠের মাঝখানে। জায়গাও অনেকটা ছিল। জমায়েতও ভালো হয়েছিল। এবার তা ফের ভিক্টোরিয়ার দিকে হয়েছে। ৪৮/৩২ ফুট ত্রিস্তরীয় মঞ্চ, মাঝখানে পোডিয়াম। শনিবার পড়ন্ত বেলায় দেখা গেল, সেই মাইক্রোফোন লাগানোর কাজ চলছে। এছাড়া, সমাবেশে ড্রোন থেকে শুরু করে ক্যামেরা, এসব পেশাদারী সংস্থাকেই দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশের ভিড় ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয়তা এবং সাফল্যের নজির রেখেছে।
তবে সেই ভিড়ের প্রতিফলন ২০১১ সালের পর থেকে আর ভোটবাক্সে পড়েনি। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগেও যুবদের ব্রিগেডে ভাল জনসমাবেশ হয়েছিল। তবে ৪২টির মধ্যে একটি আসনও সিপিএম পায়নি। তার আগে একুশের বিধানসভাতেও শূন্য। তা ছাড়া, গত লোকসভা নির্বাচনে তরুণ প্রজন্মের একাধিক মুখকে প্রার্থী করেও লাভ হয়নি সিপিএমের। সকলেরই জামানত জব্দ হয়েছে। এবারের ব্রিগেড সমাবেশ আয়োজন করেছে দলের কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুর সংগঠন। তাদের নেতানেত্রীরাই প্রধান মুখ। কারণ, এই অংশই আজ সিপিএমের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গ্রামের গরিব-কৃষক-খেতমজুর সমাজ আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমুখী প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন। রাজ্য সরকার তাদের পাশে রয়েছে। বাংলার এই অংশের মানুষের পূর্ণ আস্থা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই। তা বিলক্ষণ জানেন আলিমুদ্দিনের ম্যানেজাররাও। এই অংশের মানুষের মন ফিরে পেতে ব্রিগেড ডাকা হলেও গোটা সিপিএম পার্টিকেই নামতে হয়েছে। কারণ, দলেরই একাংশের আশঙ্কা, ময়দান নাও ভরতে পারে। আর তাই ভিড় টানতে প্রাথমিকভাবে দলের প্রবীণদের সঙ্গে নবীন মুখকেও তুলে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাঠ না ভরার আশঙ্কায় তাই মঞ্চও কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু তার পরও প্রশ্ন, ছাব্বিশের নির্বাচনে ব্রিগেডে লোক এনেও দলের কিছু লাভ হবে কি? ভোটবাক্সে কি কোনও প্রতিফলন পড়বে? কারণ, সিপিএমের ডাকে যাঁরা ব্রিগেড ভরান তাঁরাই ভোটের সময় অন্য দলের প্রতীকে বোতাম টেপেন। রাজ্য থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর একের পর এক ভোটে বামের ভোট রামে চলে গিয়েছে। আর তাই রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর কটাক্ষ, ব্রিগেডে সিপিএমের যা লোক হবে তার নব্বই শতাংশই বিজেপিকে ভোট দেবে।
আজ, হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট ৭টি মিছিল যাবে ব্রিগেডে। পার্টির ও গণসংগঠনগুলির বিভিন্ন দপ্তরে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা লোকেদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় শনিবার রাতে। গরমে সমাবেশ, তাই শুরু হবে দুপুর তিনটের সময়। শিক্ষা দুর্নীতি-সহ আরও নানা ইস্যুতে এই সমাবেশ সিপিএমের। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মৃত্যুর পর সিপিএমের প্রথম ব্রিগেড। তাই আজ ব্রিগেডের দিকে বামেদের তো বটেই নজর থাকবে গোটা রাজনৈতিক মহলেরই। এদিকে, ছুটির দিনে সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরে যানজট রুখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সমস্তরকম ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.