অর্ণব আইচ: হাসপাতাল জানিয়েছিল, করোনা টেস্ট নেগেটিভ। সেইমতো ডিসচার্জ সার্টিফিকেটও দিয়ে দিয়েছিল। নিশ্চিন্ত হয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন ৬৮ বছরের বৃদ্ধ। কিন্তু এক দিন বাদেই মাথায় বাজ। বাড়িতে ফোন করে স্বাস্থ্যদপ্তর জানায়, বৃদ্ধের শরীরে কোভিড-১৯ মিলেছে। সোমবার স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিকরা এসে তাঁকে নিয়ে গিয়ে এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে মৃত্যুসংবাদ এসেছে। একই সঙ্গে পরিবারের জন্য নিয়ে এসেছে একই উদ্বেগের বার্তা। কারণ, করোনা নেই শুনে বৃদ্ধ যে সবার সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করেছেন! আসবাবপত্র থেকে বাথরুম ব্যবহার করেছেন আগের মতোই। কারও কোনও আশঙ্কা হয়নি। এবার কী হবে?
বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধের স্ত্রী, ছেলে, বউমা ও দুই নাতি। নাতিদের এক জনের বয়স ছ’বছর, অন্য জনের সাত মাস। স্বাভাবিকভাবেই উত্তর কলকাতায় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকায় বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিটের পুরো পরিবারটি শঙ্কায় সিঁটিয়ে। ত্রাস ছড়িয়েছে পড়শিদের মধ্যেও। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ ওই রাস্তার একাংশ সিল করে দিয়েছে। বাড়িটি তো বটেই, পুরো পাড়া স্যানিটাইজ করা হয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিকের বক্তব্য: বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর তাঁরা পান স্থানীয় বাসিন্দা ও বাড়ির লোকের কাছ থেকে। ডেথ সার্টিফিকেট এখনও হাতে আসেনি। তাই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত নয়। বৃদ্ধর ছেলে জানিয়েছেন, লকডাউনের পর তাঁর বাবা বাড়ি থেকে বিশেষ বার হতেন না। শুধু মাঝেমধ্যে ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির কাছে সবজি-বাজারে যেতেন। ওই বাজার রোজ ভিড়ে ভিড়াক্কার। বাড়ির লোকের অনুমান, বৃদ্ধ সেখান থেকেও সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ২০ এপ্রিল বৃদ্ধের শুকনো কাশি শুরু হয়েছিল, জ্বরও আসে। এক দিন বাদে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তারবাবু যত তাড়াতাড়ি বাঙুরে নিয়ে যেতে বলেন। ২২ তারিখে বাড়ির লোক ওঁকে বাঙুরে নিয়ে গেলে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ২৫ তারিখে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফোনে জানানো হয়, করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, পেশেন্টকে বাড়ি নিয়ে যান। পর দিন হাসপাতাল ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেয়। বৃদ্ধকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। তখনও তাঁর কাশি ছিল। কিন্তু বৃদ্ধ পরিজনদের বলেন, তিনি ভাল আছেন। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে খোলা মনে মেলামেশাও করেন। ছেলের বক্তব্য, ২৭ তারিখে স্বাস্থ্যভবন থেকে ফোনে এক আধিকারিক জানান, বাবার রিপোর্ট পজিটিভ। কিন্তু তা হলে হাসপাতাল ছেড়ে দিল কেন?
পুত্রের দাবি, ‘উলটপুরাণের’ ব্যাখ্যা হিসাবে স্বাস্থ্যভবন যুক্তি দেয়, নাক ও গলা থেকে রস নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা হয়েছিল। একটি পরীক্ষার ফল নেগেটিভ দেখে হাসপাতাল রোগীকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত রিপোর্ট এসেছে পজিটিভ। মানে ওঁর শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। ওই কর্তা জানিয়ে দেন, ওঁকে বাড়িতে রাখা যাবে না। স্বাস্থ্যভবন গাড়ি পাঠাচ্ছে। তাতে চাপিয়ে বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রবল আতঙ্ক নিয়ে ছেলে শুধিয়েছিলেন, বাবা বাড়ির প্রত্যেকের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। আমাদের এখন কী হবে?
ওই স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, আপাতত ওঁদের হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে। ৬ মে তাঁরা স্বাস্থ্যদপ্তরে যোগাযোগ করলে সবাইকে ইএসআই জোকার কোয়ারান্টাইন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে এক দিন রেখে লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। কারও শরীরে করোনা ভাইরাস মিললে আলাদাভাবে তাঁর চিকিৎসা হবে। সোমবার বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর উৎকণ্ঠায় ছিলেন বাড়ির লোক। ছেলের দাবি, মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানানো হয়, তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে তিনি হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে মৌখিকভাবে তাঁকে বাবার মৃত্যুসংবাদ জানানো হলেও এখনও ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তাই বুঝতে পারছেন না, মৃত্যুর কারণ করোনা, না কি অন্য কিছু।
পুত্র জানিয়েছেন, বাবার মরদেহ তাঁদের দেখতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল জানিয়ে দিয়েছে, নিয়ম মেনে সৎকারের জন্য দেহটি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.