Advertisement
Advertisement

Breaking News

জটিল অস্ত্রোপচার

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও ক্যানসার রোগীর অস্ত্রোপচার পিজিতে

মানবিকতার টানে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করেই তিন ডাক্তার অপারেশনে এগিয়ে আসেন।

COVID-19: Sergeons risks Cancer operation amidst corona scare
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:April 30, 2020 11:11 am
  • Updated:April 30, 2020 11:11 am  

কৃষ্ণকুমার দাস: প্রবল শ্বাসকষ্ট ছিল। জ্বরে পুড়ছিল গা। ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধের উপসর্গের সঙ্গে কোভিড রোগীর হুবহু মিল। চাইলেই করোনা হাসপাতালে রোগীকে রেফার করে নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে যেতে পারতেন সরকারি সার্জনরা। কিন্তু সেই পথে না হেঁটে নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংক্রমিত হতে পারেন জেনেও শ্বাসনালিতে অপারেশন করে ক্যানসার আক্রান্ত ওই বৃদ্ধের প্রাণ বাঁচালেন কলকাতার পিজি হাসপাতালের ডাক্তাররা।

নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে রাজ্যের অধিকাংশ নাক-কান-গলার বিশেষজ্ঞ সার্জনরা যখন অপারেশন থিয়েটার থেকে দূরে তখন নিঃশব্দে এগিয়ে এসে নজির গড়লেন রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পিজির ডাক্তাররা। কারণ, করোনাভাইরাস শরীরে ঢুকে প্রথম বাসা বাঁধে রোগীর গলায়। তাই গলা থেকেই লালারস নিয়ে কোভিড-১৯ (COVID-19) জীবাণু আছে কি না তা জেনে নেন ডাক্তাররা। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, যে রোগীর শ্বাসনালিতে অপারেশন হয়েছে তাঁর কোনও নথিই ছিল না। শুধু তাই নয়, রেড জোনে থাকা নিমতার মতো করোনার ‘সুপার হটস্পট’ থেকে ইসমাইল আলি নামে ওই বৃদ্ধ তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু কেন এতটা ঝুঁকি নিয়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষা না করেই কেন অপারেশন করা হল? উত্তরে পিজি’র নাক কান গলা বিভাগের প্রধান ডাঃ অরুণাভ সেনগুপ্ত বুধবার জানিয়েছেন, “মানুষের প্রাণটা তো আগে বাঁচাতে হবে। গলায় ট্র্যাকিওস্টোমি (Tracheostomy) করলে আপাতত শ্বাসকষ্ট কমে যাবে দেখেই ঝুঁকি নিয়েও দ্রুত অপারেশন করা হয়েছে।” ঝুঁকি নেওয়া পিজির তিন চিকিৎসক হলেন ডাঃ কৌস্তুভ দাসবিশ্বাস, ডাঃ প্রদীপ্ত ঘোষ ও ডাঃ সৌম্যদীপ্ত পুরকাইত।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ফিরিয়েছে হাসপাতাল, লকডাউনে অটোতেই সন্তান প্রসব কসবার বধূর]

উত্তর ২৪ পরগনার এক হতদরিদ্র পরিবারের অভিভাবক ইসমাইল আলি। আগে দু’বার হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগে এসেছেন, ভরতিও হয়েছেন। কিন্তু বায়োপসি করার আগেই গলায় সূচ ফোটানোর ভয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফের তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে মঙ্গলবার পিজির আউটডোরে আসেন। তখন সেখানে রোগী দেখছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট-প্রফেসর ডাঃ কৌস্তুভ দাসবিশ্বাস। গলাতেই যেহেতু করোনার ভাইরাস এসে প্রথমে ঠাঁই নেয় তাই প্রথমে ঝুঁকি নিয়ে এন-৯৫ মাস্ক পরে রোগীর পরীক্ষা করেন তিনি। গলায় যন্ত্র দিয়ে মুখের কাছে গিয়ে টর্চ জ্বেলে ডাঃ দাসবিশ্বাস দেখতে পান শ্বাসনালিতে ক্যানসারের মাংসপিন্ড বড় হওয়ায় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে প্রবল কষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ট্র্যাকিওস্টোমি করার সিদ্ধান্ত নেন। অংশ নেন ডিউটিতে থাকা অন্য ইএনটি সার্জন ডাঃ প্রদীপ্ত ঘোষ ও ডাঃ সৌম্যদীপ্ত পুরকাইত। প্রাথমিকভাবে গলায় নল বসিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের পাশাপাশি খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। অপারেশনের সময় অবশ্য তিনজনেই স্বাস্থ্যভবন থেকে দেওয়া পিপিই ও মাস্ক পরে নিয়েছিলেন।

ডাঃ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, “ওই রোগীর লালারস পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। দু’দিন পরে রিপোর্ট আসবে। তখন জানা যাবে বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত কি না। কোভিড ভাইরাস না পেলে তবেই বায়োপসি করা হবে।” আর যদি বৃদ্ধের কোভিড-১৯ পাওয়া যায় তবে ওই তিন চিকিৎসককেও পরীক্ষা করতে হবে, কোয়ারেন্টাইনেও যেতে হবে, এমন সম্ভবনাও রয়েছে। এসব উপেক্ষা করেই শুধু ডাক্তার হিসাবে দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবিচল থাকা নয়, মানবিকতার টানেও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করেই তিন ডাক্তার অপারেশনে এগিয়ে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন পিজি হাসপাতালের অধিকর্তা ডাঃ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

[আরও পড়ুন: ৪০০ ছাড়াল কলকাতার আক্রান্তের সংখ্যা, সতর্কতা জারি মহানগরের ‘সুপার হটস্পট’গুলিতে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement