ফাইল ফটো
কলহার মুখোপাধ্যায়: সুস্থ হব, কি হব না, এই দোলাচলে হাসপাতালে দিনের পর দিন কেটেছে। করোনার সঙ্গে যুঝে অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন। আর প্রাণ ফিরে পেয়ে প্রথমেই মনে হয়েছে কিছু করা দরকার। যারা প্রতিনিয়ত প্রাণ হাতে করে করোনার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন, সেই সব স্বাস্থ্য ও সাফাইকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে মনস্থির করে ফোন করে বসেন স্থানীয় পুরপিতাকে। এবং তাঁর হাতে তুলে দেন নগদ অর্থ। যা দিয়ে দুস্থ, দিন আনা দিন খাওয়া কর্মীদের জন্য খাবার কেনা হবে।
করোনা যুদ্ধে জয়ী ওই ব্যক্তি ল্টলেকের এডি ব্লকের বাসিন্দা। ২২ মার্চ জ্বর এসেছিল তাঁর। বাড়িতেই ডাক্তার দেখান। জ্বর না কমায় ২৯ তারিখ সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। সেখানে টেস্ট রিপোর্ট আসার পর দেখা যায় তিনি করোনা পজিটিভ। এরপর তার সংস্পর্শে আসা তাঁর ছেলে ও পরিচারিকাকে পাঠানো হয় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। স্ত্রী ও মেয়েকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর। চিকিৎসার পর গত সপ্তাহে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন গোপীবাবু। তারপর ফোন করেন পুরপিতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে।
অনিন্দ্যবাবু জানিয়েছেন, ফোনে সাফাই কর্মীদের স্বাস্থ্যের কথা জিজ্ঞেস করেন করোনা যুদ্ধে জয়ী ওই ব্যক্তি। তাঁদের নিয়ে তিনি যে উদ্বিগ্ন, এ কথা জানিয়ে কিছু সাহায্য করতে পারেন কিনা তা জিজ্ঞেস করেন। পুরপিতা কিছুটা অবাক হয়ে উত্তর দেননি প্রথমে। তারপরের দিন আবার ফোন এবং একই প্রস্তাব দিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, “আমি বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছি না। আপনি যদি কিছু করেন আমার হয়ে, বাধিত হব।” তারপর ঠিক হয় তিনি ১১ হাজার টাকা পুরপিতার হাতে তুলে দেবেন। সেই টাকা দিয়ে ওয়ার্ডের সাফাই ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে দেবেন পুরপিতা। অনিন্দ্যবাবু জানিয়েছেন, সেই অর্থ দিয়ে চাল, ডাল, আলু, তেল, সাবান ইত্যাদি কিনে পয়লা বৈশাখের দিন কর্মীদের দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সদ্য হাসপাতাল থেকে ফের সেই ব্যক্তি জানিয়েছেন, “হাসপাতাল থেকে ফিরে মনে হয়েছিল যারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোটা সবার কর্তব্য। তাই সামান্য সাহায্য করেছি। এতে যদি তাদের উপকার হয় আমি খুশি হব।” আর অনিন্দ্যবাবুর বক্তব্য, “একজন আক্রান্ত সুস্থ হয়ে করোনা সৈনিকদের জন্য কিছু করার কথা ভাবছেন, এমন নজির বিরল বললে কম বলা হবে।”
কোয়ারেন্টাইনে থাকা ওই ব্যক্তির ছেলে ও পরিচারকের করোনা টেস্ট হয়েছে। তাঁদের দেহে সংক্রমণ হয়নি বলে জানা গিয়েছে। আপাতত তাঁর পরিবারে খুশির হাওয়া। যার খানিকটা করোনা লড়াইয়ের বাকি সৈনিকদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.