গৌতম ব্রহ্ম: ভেন্টিলেশনের শেষ পর্যায়ে ECMO সাপোর্টে থাকার পর করোনাকে হারিয়ে বেঁচে ফিরলেন ২৪ বছরের এক তরুণী। আর তাঁকে সুস্থ করে নজির গড়ল ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল। হাসপাতালের দাবি, ভারতে তিনিই প্রথম করোনা আক্রান্ত, যিনি ECMO সাপোর্টে থাকার পর এই মারণ ভাইরাসকে হারাতে সমর্থ হয়েছেন। ওই তরুণী ১২ দিন ধরে প্রায় ৩০০ ঘণ্টা ECMO সাপোর্টে ছিলেন।
১৭ মে প্রবল জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে ভরতি হন। তাঁকে যখন জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়, চিকিৎসকরা দেখেন তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ৩৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রোগীর এমন পরিস্থিতি চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর ওজন প্রায় ১০০ কিলোগ্রাম। ফলে স্থূলতা তাঁর পরিস্থিতির পিছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করছিলেন চিকিৎসকরা। ওই তরুণীর বাবা জানিয়েছেন, ১০ মে থেকে তিনি থেকে তিনি জ্বর এবং গলা ব্যথায় ভুগছিলেন। এরপর তাঁর জ্বর কমে যায়। কিন্তু এক দিনের মধ্যেই আবার তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। তাঁকে ভেন্টিলেশনে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তাতেও অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। তাই পরিবারের সম্মতি নিয়ে তাঁকে ECMO সাপোর্টে রাখা হয়। ২৯ মে পর্যন্ত, ১২ দিন ECMO সাপোর্টে ছিলেন ওই তরুণী।
এর আগে, নয়াদিল্লির এইমসে একজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে এবং চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আরও একজন করোনা আক্রান্তকে ECMO সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দু’জনই কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা মারা যান।
আমরি হাসপাতালের ECMO বিশেষজ্ঞ সোহম মজুমদার জানিয়েছেন, ভেন্টিলেটর ও ECMO দেওয়া সত্ত্বেও বেঁচে ফিরেছেন কালীঘাটে তরুণী। করোনা যুদ্ধে এটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। তিনি বলেন, “সাধারণ ECMO পদ্ধতির মতো আমরাও তাঁর শরীর থেকে রক্ত এনে আবার রক্ত অক্সিজেনাইটিড করে তাঁর শরীরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিলাম। তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর জন্যই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল। তিনি প্রায় ৩০০ ঘণ্টা ECMO সাপোর্টে ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। বাড়ি যেতে পারেন।” ক্রিটিকাল কেয়ার অ্যান্ড ইন্টারনাল মেডিসিনে সিনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক মহুয়া ভট্টাচার্য বলেন, “সবসময় কেবলমাত্র ভেন্টিলেটর সহায়তায় COVID-19 পজিটিভ রোগীদের শ্বাসকষ্ট পরিচালিত করে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। কখনও কখনও রোগীকে ECMO সাপোর্টও দিতে হয়। একটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। ২৪ বছরের ওই তরুণীর ক্ষেত্রে ECMO সাপোর্ট অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। এবং এটিই তাঁকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করেছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.