ছবি: সংগৃহীত
অভিরূপ দাস: নিউ ইয়র্কে যা দেখা গিয়েছিল এপ্রিলে। তিলোত্তমায় তা দেখা যাচ্ছে আগস্টের শেষে। ধুম জ্বর নেই। সর্দিও নামমাত্র। বিপদ অন্যত্র। কারও হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে প্রদাহ, কারও হৃৎপিণ্ডের পাম্প করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি এমনই পাঁচ শিশু ভরতি হয়েছিল পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে। শারীরিক অবস্থা তাদের এতটাই সঙ্গীন যে আইসিইউ-তে রাখতে হয়। কোভিড টেস্ট করাতে গিয়ে দেখা যায় কেউ আরটিপিসিআর পজিটিভ, কারও কোভিড আইজিজি অ্যান্টিবডি পজিটিভ। অর্থাৎ করোনা শরীরে প্রবেশ করেছিল। বেরিয়েও গিয়েছে। কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে এমআইএসসি (Multisystem inflammatory syndrome in children) দিয়ে।
এ কোন অসুখ? কোভিডের সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের এই সমস্যাকে চিকিৎসকরা বলছেন এমআইএসসি বা মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিন্ড্রোম অ্যাসোসিয়েটেড উইথ কোভিড। সাধারণত পাঁচ থেকে দশ এই বয়সের বাচ্চাদের মধ্যেই দেখা গিয়েছে এমআইএসসি। সংজ্ঞাহীন দুশো চল্লিশ ঘণ্টা আইসিইউ-তে কাটিয়ে পাঁচ শিশুই বাড়ি ফিরে গিয়েছে। তবে তাদের হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা এতটাই কমে গিয়েছিল যে কোনও মুহূর্তে আশঙ্কা ছিল হার্ট ফেলিওরের। গত এপ্রিলে নিউ ইয়র্ক, ইতালি, ইংল্যান্ডে প্রথম এরকম ঘটনা দেখা গিয়েছিল। বেশ কিছু শিশু হৃৎপিণ্ডের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছিল।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরির কথায়, “এ দেশে চণ্ডীগড় আর পার্ক সার্কাসের ইন্সটিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে এই ধরনের অসুখ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।” সেই গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, সাধারণত পাঁচ বছরের নিচের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাকে কাওয়াসাকি ডিজিজ বলাই যায়। সেই সারা গায়ে র্যাশ। তীব্র প্রদাহ, জ্বর। কখনও হাত, পা, মুখ ও জিভের রং বদল। কখনও হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া। তবে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের যেটা হচ্ছে তা একেবারে নতুন। এমআইএসসি (মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিন্ড্রোম অ্যাসোসিয়েটেড উইথ কোভিড) বা পিআইএমএস (পেডিয়াট্রিক মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমাটরি সিন্ড্রোম) নামে ডাকা হচ্ছে তাকে। দুটি অসুখই আদতে এক।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন এই অসুখ নিয়ে। কোলের শিশুর হার্ট অ্যাটাকের কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন না অভিভাবকরা। কিন্তু পেডিয়াট্রিক মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমাটরি সিন্ড্রোমে যে কোনও মুহূর্তে হৃদযন্ত্র বিকল হতে পারে শিশুর। এ অসুখের সঙ্গে করোনাভাইরাসের যোগসূত্র রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ভাইরাসের সংক্রমণের পরেই এমন রোগ দেখা দিচ্ছে শিশুদের মধ্যেই। কারণ, এপ্রিলে নিউ ইয়র্কের যে ৭৩টি শিশুর মধ্যে দেখা দিয়েছে এমন সব উপসর্গ, তারা সকলেই কোভিড পজিটিভ ছিল। নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছিল, শিশুদের মধ্যে যে রোগ ধরা পড়ছে সেটা কাওয়াসাকি। কলকাতায় পাঁচ বছরের উপরের বাচ্চাদের যা আক্রমণ করছে এমআইএসসি বা পিআইএমএস নাম নিয়ে। এ অসুখ কেবল শিশু ও কম বয়সীদের শরীরেই হানা দেয়। ডাক্তারদের সমীক্ষা বলছে আগে বছরে ১০০ জন শিশুর মধ্যে হয়তো একজনের শরীরে ধরা পড়ত। কিন্তু করোনার সংক্রমণে তা এখন ডালপালা মেলছে। আপাতত জ্বর হলেই সত্বর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরির কথায়, আইসিএইচে যারা এসেছিল তাদের প্রত্যেককেই আইসিইউতে দিতে হয়েছিল। এ অসুখ কাওয়াসাকি না, কাওয়াসাকির মতোই। তবে আরও ভয়ংকর। জ্বরের সঙ্গে ঠোঁট, চোখ লাল হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে আসুন। ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিন ইঞ্জেকশন ছাড়া এদের বাঁচানো সম্ভব নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.