অর্ণব আইচ: এবার করোনা আতঙ্কে ওষুধ ব্যবসায়ীরাও। আতঙ্কের সূত্রপাত দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ল মধ্য কলকাতার বড়বাজারের মেহতা বিল্ডিংয়ে। বৃহস্পতিবার ভবানীপুরের বাসিন্দা এক ওষুধ ব্যবসায়ীর শরীরে পাওয়া যায় করোনা ভাইরাস। ওই ব্যক্তি মেহতা বিল্ডিং-এর ওষুধ ব্যবসায়ী। জ্বর আসার আগে পর্যন্ত তিনি রীতিমতো বসেছেন তাঁর ওষুধের দোকানে, এমনই দাবি অন্য ব্যবসায়ীদের। এরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মেহতা বিল্ডিং ও তার পাশের বাগরি মার্কেটে। তারই জেরে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুদিন ধরে স্যানিটাইজ করা হয়েছে মেহতা বিল্ডিং। বাদ পড়েনি বাগরি মার্কেটও।
এদিকে, বেহালা এয়ারপোর্টের অদূরে পর্ণশ্রীর উপেন ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা এক প্রৌঢ়ার শরীরে পাওয়া গিয়েছে করোনা ভাইরাস। তিনি বেঙ্গালুরু থেকে ফেরার পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে খবর। স্যানিটাইজ করা হয়েছে পর্ণশ্রী ওই বাড়িটিও। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের লোকজন ও ভাড়াটেদেরও পাঠানো হয়েছে কোয়ারনটাইনে। এই ঘটনার জেরে পর্ণশ্রী ও বেহালা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবানীপুরের পদ্মপুকুর রোডের একটি বহুতলে পরিবারের সঙ্গে থাকেন ওই ওষুধ ব্যবসায়ী। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তিনি মাস দুয়েক আগে বাইরে গিয়েছিলেন। যদিও তিনি কোথায় গিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করেননি। মেহতা বিল্ডিংয়ের সি ব্লকের একতলায় রয়েছে তাঁর ওষুধের দোকান। এদিন অন্য ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, জরুরি পরিষেবা হওয়ার কারণে লকডাউনের মধ্যেও কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরা অনেকেই দোকান খোলা রাখছেন। ভবানীপুরের ওই ব্যবসায়ী প্রায় প্রত্যেকদিন দোকানে আসতেন। গত ৩১ মার্চ তিনি শেষ আসেন দোকানে। পরিবারের কাছ থেকে অন্য ব্যবসায়ীরা খবর পেয়েছেন যে, এর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ওই ব্যবসায়ীর শরীরে করোনা ভাইরাস থাবা দিয়েছে, এই খবর পাওয়ার পরই পুরো মেহতা বিল্ডিং জুড়ে শুরু হয়ে যায় আতঙ্ক। বিশেষ করে সি ব্লকের একতলার অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে দেন। খবর যায় পুরসভায়। পুরো বাড়িটি ওষুধ মেশানো জল দিয়ে স্যানিটাইজ করা হয়। এদিনও পুরসভার গাড়ি বড়বাজারে আসে। ওই ব্যবসায়ীর দোকান প্রত্যেকটি তলার মেঝে ও আশপাশের দোকানগুলি স্যানিটাইজ করে পুরসভা। বাণিজ্যিক বাড়িটির একতলার এক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, তাঁদের অনেকেই কথা বলেছেন ওই করোনা আক্রান্ত ব্যবসায়ীর সঙ্গে। আবার দোকানে ক্রেতারাও যাতায়াত করেছেন। তাই ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোনওভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে কি না, তা তাঁরা কেউ জানেন না। সেই কারণে ওষুধ ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই খবর পেয়ে পাশের বাগরি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তাই ওই বাণিজ্যিক বাড়িটিও স্যানিটাইজ করা হয়েছে।
একইভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ভবানীপুর অঞ্চলেও। ব্যবসায়ী যে বহুতলের বাসিন্দা, সেই বাড়িটি ইতিমধ্যেই সিল করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীর স্ত্রী, মেয়ে ও আরও কয়েকজনকে কোয়ারানটাইনে পাঠানো হয়েছে। পুরো বাড়িটি স্যানিটাইজ করা হয়েছে। বাড়ির বাসিন্দারা বাইরে বের হতে পারছেন না। বাড়িতে বাইরে থেকে আসা বিশেষ কাউকে প্রবেশও করতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনে বাসিন্দাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের ধারণা, ওই ব্যক্তি শরীরে ভাইরাস নিয়ে পদ্মপুকুর রোডের দোকান বা বাজারে হয়তো গিয়েছিলেন। কথা বলেছেন বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গেও। তাঁর বাড়ি থেকে যদুবাবুর বাজার খুব বেশি দূরে নয়। তাই তাঁর কাছ থেকে অসুখটি অন্যদের শরীরের ছড়িয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন। স্বাভাবিকভাবেই পদ্মপুকুর, চক্রবেড়িয়া-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দা ও বাজারের দোকানদারদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.