ছবি: প্রতীকী
শুভঙ্কর বসু: করোনায় মৃত্যুতে শবদেহ সৎকারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের পৃথক গাইডলাইন রয়েছে। তা সত্ত্বেও এ রাজ্যে করোনা রোগীর মৃতদেহ সৎকার নিয়ে একাধিক বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সমস্যা নিরসনে এবার রাজ্যে করোনায় মৃত্যুতে শবদেহ সৎকারে গাইডলাইন বেঁধে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। এবার থেকে এই গাইডলাইন মেনেই করোনায় মৃত ব্যক্তি বা মহিলার দেহ সৎকার করতে হবে। হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এবার থেকে করোনায় মৃতের দেহ না স্পর্শ না করে, দূর থেকে ধর্মীয় উপাচার সারা যাবে।
বিনীত রুইয়া নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি টিবি রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ গাইডলাইনে জানিয়েছে, করোনায় মৃত্যুতে দেহের ময়না তদন্তের প্রয়োজন না হলে হাসপাতালের নিয়মকানুন শেষ করার পর তৎক্ষণাৎ মৃতের পরিজন অর্থাৎ পিতা-মাতা বা সন্তান কিংবা নিকটাত্মীয়কে মৃতদেহ তুলে দিতে হবে। হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ সোজা শ্মশান বা কবরস্থানে নিয়ে যেতে হবে। এই কাজটি সারবেন সরকার নিযুক্ত কর্মীরা। মৃতদেহের মুখের দিকটা দেখা যায় এমন একটি বডি ব্যাগে মৃতদেহটি সংরক্ষণ করতে হবে। যারা শবদেহটি বহন করবেন তাদের পিপিই কিট, মাস্ক, গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় থাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও গাইডলাইনে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মৃতদেহটি যে গাড়িতে বহন করা হবে সেটি যেন কোনোভাবেই দূষিত অবস্থায় না থাকে। শ্মশান ও কবরস্থানের যেসব কর্মীরা মৃতদেহ সৎকারের কাজ করবেন তাদের ক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রাখতে হবে। মৃতদেহ শ্মশানে বা কবর স্থানে পৌঁছানোর পর বডি ব্যাগ খোলার কাজ করবেন সৎকারের যুক্ত শ্মশান কর্মীরা। সেখানেই শেষ বারের জন্য মৃতদেহ দেখার সুযোগ পাবেন পরিজনেরা। এবং মৃতদেহ স্পর্শ না করে ধর্মীয় উপাচার সারতে পারবেন তাঁরা। শেষকৃত্য সম্পন্ন হবার পর কবরস্থান বা শ্মশান কর্মী এবং পরিজনদের স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই ভিড় বা জমায়েত করা যাবে না। এছাড়াও আদালত জানিয়েছে, দাবিহীন মৃতদেহের ক্ষেত্রে পূর্ণ মর্যাদাসহ সৎকারের দায়িত্ব পালন করতে হবে রাজ্য সরকারকে।
নির্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, আদালত মনে করে, শেষকৃত্য পর্যন্ত জীবনের অধিকার রয়েছে। এবং করোনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রেও সেই অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা যায় না। তাছাড়া আমাদের দেশে প্রথাগত বিশ্বাস এই যে, শেষকৃত্য না হলে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায় না। এবং এই বিশ্বাস মূল পর্যন্ত নিমজ্জিত। করোনায় মৃত ব্যক্তির পরিজনদের এই বিশ্বাস ও অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা যায় না। কারণ সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারায় এই অধিকারকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। ফলে করোনায় মৃতর ক্ষেত্রেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। এরপরই মামলাটি খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.