অর্ণব আইচ: চোখের সামনেই পুড়ে যাচ্ছিল বাগরি মার্কেটের দোকানটি। আগুন গ্রাস করে নিয়েছিল দোকানের সব কিছু। দেড় বছর আশায় আশায় দিন গুনছিলেন পোস্তার ব্যবসায়ী। আর মাত্র কিছু দিন। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর ফিনিশিং টাচ। তার পরই ঝাঁ চকচকে নতুন দোকানে বসে ব্যবসা শুরু করবেন বলে মনে করে ছিলেন তিনি।
কিন্তু তার আগেই কাশি আর জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় ব্যবসায়ীর। পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। মধ্য কলকাতার পোস্তা এলাকার একাধিক বাসিন্দার শরীরে করোনা থাবা বসিয়েছে। পোস্তার হাঁসপুকুরিয়া অঞ্চলে এই মৃতু্যর ঘটনা ঘিরে নতুন করে পোস্তার বাসিন্দাদের মধে্য ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। কারণ, এলাকার বাসিন্দারা এখনও বুঝতে পারছেন না যে, কীভাবে তাঁর শরীরে ছড়াল এই রোগ। তাঁদের দাবি, লকডাউনের পর থেকে ব্যবসায়ী বাড়ি ও বাজার ছাড়া কোথাও যেতেন না।
পোস্তার বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ীর দোকান ছিল বাগরি মার্কেটে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অগ্নিকাণ্ড ঘটে সেখানে। বাগরি মার্কেটের ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্ণধার আশুতোষ সিং জানান, ‘এ’ ব্লকে ছিল ওই ব্যবসায়ীর দোকান। তাঁর চোখের সামনেই সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায় দোকানটি। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এর পর থেকে গুদাম থেকে মাল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছিলেন তিনি। তিলে তিলে ব্যবসাটিকে দাঁড় করাচ্ছিলেন। প্রতিবেশী ও পরিজনদের বলতেন, অপেক্ষা করে রয়েছেন, কবে বাগরির দোকান খুলবে।
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে তাঁর প্রথমে কাশি হয়। তার পর শুরু হয় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট। প্রথমে তিনি মধ্য কলকাতার একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত বুধবার সকালে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে খবর দেয় পরিবার। অ্যাম্বুল্যান্স তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ভর্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ভর্তির পরই লালারস পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল। রাতে আসা রিপোর্টে জানানো হয় যে, তাঁর শরীরে করোনা পাওয়া গিয়েছে। ওই হাসপাতাল থেকে এই তথ্য পুরসভার মাধ্যমে পুলিশের কাছে আসে। ব্যবসায়ীর পরিবারের পাঁচজনের শরীরে কোনও উপসর্গ মেলেনি। তাই তাঁদের হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে। পুরসভার পক্ষে বাড়ি ও এলাকাটি স্যানিটাইজ করা হয়েছে। হাঁসপুকুরিয়ার একটি অংশ সিল করে দিয়েছে পুলিশ।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাজারে পারস্পরিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না বলে ছড়াচ্ছে এই রোগ। পোস্তার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাঁদের বাজার প্রত্যেকদিন তিন ঘণ্টা করে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। পোস্তা বাজারে বাইরে থেকে আসা ট্রাকের চালক ও খালাসি এবং মুটিয়াদের হিন্দি ও ভোজপুরি ভাষায় সচেতন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.