শুভঙ্কর বসু: বিদ্যুৎ জরুরি পরিষেবা। লকডাউন ঘোষণার সময় অন্য সব জরুরি সামগ্রীর মধ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু খাস শহর কলকাতার বুকে প্রায় ছ’মাস বিদ্যুৎহীন গোটা পরিবার। অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি মিলেছে। কিন্তু ঠিক কী কারণে এই দীর্ঘ সময় জরুরি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে যন্ত্রণা পোহাতে হল তাদের?
জানা গিয়েছে, অনলাইন আবেদনের গেরোয় এই ঝক্কি পোহাতে হয়েছে পরিবারটিকে। ক্রিক লেনে ৮/১ডি নম্বর বিল্ডিংয়ের তিনতলায় একটি ফ্ল্যাটে পরিবারকে নিয়ে ভাড়া থাকেন থাকেন রুমকি রানা। বিদ্যুৎ বিল ও ঘরভাড়া বাবদ প্রতি মাসে বাড়ি মালিককে সময় মত ভাড়া চুকিয়ে দিতেন তিনি। অভিযোগ গত মার্চেও তাই করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও হঠাৎ করে তাঁর ফ্লাটের বিদ্যুৎ কানেকশন কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খোঁজখবর নিয়ে তিনি জানতে পারেন, যে মিটারের মাধ্যমে তাঁর ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ আসত সেটি ছিল বাড়ি মালিকের নামে। কোনও কারণে বাড়ি মালিক মার্চ মাসে মিটারটি সারেন্ডার করেন। আর সে কারণেই তার বিদ্যুৎ কানেকশন কেটে গিয়েছে। কিন্তু ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল টেনেন্সি অ্যাক্ট’ বা ভাড়াটে আইন অনুযায়ী কোন ভাড়াটিয়া নিজের নামে বিদ্যুতের জন্য আবেদন করতে পারেন।
তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা হল, কোভিড ও লকডাউন পরিস্থিতির জেরে সশরীরে লিখিত আবেদনের পরিবর্তে অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি চালু করা হয়। আর এই অনলাইনে আবেদন করতেই বিপত্তি। মার্চ মাসে বিষয়টি জানিয়ে অনলাইনে আবেদন করলেও অভিযোগ তার ভিত্তিতে কোন পদক্ষেপ করেনি বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা CESC। অনলাইনে ওই আবেদনের ভিত্তিতে কোনও উত্তরও আসেনি। অভিযোগ, একাধিকবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। এরপর বাধ্য হয়ে অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রুমকিদেবী। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে তাঁর কৌঁসুলি মলয় ধর বিষয়টি উত্থাপন করতেই বিপক্ষের আইনজীবী সোমা রায়চৌধুরি বলেন, ওই অনলাইন আবেদনটি অসম্পূর্ণ রয়েছে। সে কারণেই কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়নি।
বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, অনলাইনে আবেদন পদ্ধতি না জানা থাকতে পারে। কিন্তু কেন বিষয়টি এতদিন পরিবারটিকে জানানো হল না? এরপরই সোমা রায়চৌধুরি জানান, নতুন করে আবেদন করলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরই বিচারপতি চক্রবর্তী রুমকি রানাকে ফের নতুন করে অনলাইনে আবেদনের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি জানিয়ে দেন, যেহেতু পরিবারটি দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে তাই সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুৎ কানেকশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.