শুভঙ্কর বসু: অভিযোগ বধূহত্যার। হাজতবাস এড়াতে কারসাজি করে আদালতকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল অভিযুক্ত পক্ষ। তথ্য লুকিয়ে পেশ করা হয়েছিল আগাম জামিনের আবেদন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। আদালতকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা ফাঁস হওয়ায় এবার উলটো বিপত্তিতে পড়েছে আবেদনকারীরা। অভিযুক্তদের গোটা পরিবারকেই অবিলম্বে জেলে পোরার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। ক্ষুব্ধ বিচারপতিদের নির্দেশ, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জেলই হবে তাদের ঠিকানা।
[উৎসবের মরশুমে শহরে মধুচক্রের পর্দাফাঁস, গ্রেপ্তার ৭]
কী ছিল সেই কারসাজি? কেমনভাবেই বা ধরা পড়ে গেল তাঁরা? ২০১৬—র ২২ অক্টোবরের ঘটনা। রামপুরহাটের বাসিন্দা রঘু শেখের বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রীর আধপোড়া মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গায়ে বেশ কয়েকটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ঘটনার পরই রঘু শেখ ও তাঁর বাবা ও ভাই বাড়ি ছেড়ে পালায়। স্ত্রীর বাপের বাড়ির তরফে রঘু শেখ, তার বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে রামপুর থানায় বধূহত্যার অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগে বলা হয়, পনের টাকা না পেয়ে প্রথমে ধারালো অস্ত্রের ঘায়েল করে শরীরে তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে মেয়েকে। সেইমতো ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ/৩২৫/৩২৬/ ৩৪ এবং ৩০৪বি ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। পরে রঘু শেখের মায়ের নামেও একই ধারায় আরেকটি অভিযোগ দায়ের হয়। পাঁচ মাস পর ২০১৭—র মার্চে কলকাতা হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান রঘু শেখ এবং তার বাবা ও ভাই। সেই আবেদন খারিজ হয়।
[পরপর হামলার জের, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেলেন বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়]
কিন্তু সেই তথ্য গোপন রেখে ২০১৮—র নভেম্বরে ফের আগাম জামিনের আবেদন করে রঘু শেখ। এবার গোটা পরিবার অর্থাৎ মায়ের নামও তাতে অন্তর্ভুক্ত করে। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু আদালতকে বোকা বানাতে চলতি মাসের ৪ ডিসেম্বর মায়ের নামে আলাদা একটি আগাম জামিনের আবেদন দাখিল করে বসে অভিযুক্তরা। উদ্দেশ্য ছিল প্রথম আবেদনটি যদি খারিজ হয়ে যায়, তাহলেও দ্বিতীয় আবেদনের সুবাদে মায়ের জামিন পাওয়ার সুযোগ থাকছে। কিন্তু সে চেষ্টা ধোপে টেকেনি। সরকারি আইনজীবীদের তৎপরতায় শেষপর্যন্ত চালাকি ধরা পড়ে গেল বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে। সব জানার পর ক্ষুব্ধ ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ জানিয়েছে, “আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা একটি বিপজ্জনক ঝোঁক। ইচ্ছাকৃত এমনটা করার জন্য তাদের বড় মূল্য দিতে হবে।” এরপরই রঘু শেখের গোটা পরিবারকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পোরার নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। সেইসঙ্গে জানিয়ে দেয়, যতদিন না পর্যন্ত মূল মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে ততদিন ওই চার অভিযুক্তকে জেলে থাকতে হবে। কোনও জামিন মিলবে না। রঘু শেখের আইনজীবীকেও তুলোধোনা করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.