অর্ণব আইচ: ফের সিবিআইকে ভর্ৎসনা আদালতের। সিবিআইয়ের তদন্ত ও তদন্তের অগ্রগতিতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক। যে সরকারি কর্মচারীর নাম নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে উঠে এসেছে তাঁকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন তিনি। এই ব্যাপারে রীতিমতো সিবিআইকে সময়সীমা বা ‘ডেডলাইন’ বেঁধে দেয় আদালত। আরও ২১ দিনের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার চার্জশিট পেশ করার আগেই তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সিবিআইকে দ্রুত তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেন তিনি। শনিবার ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারক সিবিআইকে বলেন, “রোজ একই আবেদন। যে সরকারি কর্মচারীর নাম রয়েছে, সে কোথায়? আজ পেন দিয়ে যা করার করব। মুখে কিছু বলব না। যাকে টাকা দেওয়া হয়েছে, সে হেফাজতে নেই কেন? দু’টি মামলা ছাড়া বাকি মামলাগুলি হোপলেস।”
বিচারকের ক্ষোভ প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর নির্দেশনামায়ও। নির্দেশনামায় বিচারক মন্তব্য করেন, ‘‘আমি সত্যিই হতবাক হয়েছি তদন্তের অগ্রগতি দেখে। এর আগেও আমি লক্ষ্য করেছি যে, প্রতারিত ব্যক্তিরা গোপন জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু এই ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তদন্তকারী সংস্থা সেই ব্যবস্থা করেনি। তদন্তকারী সংস্থা তদন্তে ১৫ দিন দেরিতে চলছে। নীলাদ্রি ঘোষকে যাঁরা টাকা দিয়েছেন বলে যে দাবি তদন্তকারীরা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার পর্যাপ্ত উত্তর মেলেনি। যাঁদের নাম মামলার এফআইআর-এ আছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, সেই ব্যাপারেও বিশেষ উত্তর মেলেনি।”
শনিবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হয় কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল ও নীলাদ্রি ঘোষকে। এদিন শুনানির শুরুতেই বিচারক মামলায় অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীকে ধরা হচ্ছে না কেন ও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ওই অভিযুক্তর অন্য মামলায় যোগ আছে। ফের ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় সিবিআইকে বলেন, ‘‘লোকটি কোথায়? আমি কি এখানে আপনাদের রক্ষা করতে রয়েছি? মামলায় ওই ব্যক্তিটিকে হেফাজতে নেননি কেন? এগুলো কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।’’ সিবিআইয়ের দাবি, তিনি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। যদিও বিচারক সেই যুক্তি মানতে রাজি হননি। নীলাদ্রি ঘোষের আইনজীবী বলেন, তিনি যে তাপস মণ্ডল ও কুন্তল ঘোষের মধ্যস্থতাকারী, তা রোজই লিখছে সিবিআই। কোনও পরিবর্তন নেই। তাঁকে আটকে রাখার কি একটাই কারণ? সিবিআই জানায়, নীলাদ্রি টাকা সংগ্রহ করে তাপস ও কুন্তলকে দিয়েছেন। ফলে তাঁদের সঙ্গে নীলাদ্রির আর্থিক যোগ সামনে এসেছে। তদন্ত ‘প্রসেস’-এ রয়েছে। ফের ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারক বলেন, ‘‘প্রসেসে রয়েছে বলে এখাবে এই লোকগুলিকে কতদিন আটকে রাখব? এটা কি সিভিল মামলা?’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, যে টাকার লেনদেন হয়েছে, তা কোথায় গেল? সাক্ষীদের বয়ান নেওয়া হচ্ছে। একজন সরকারি কর্মীরও নাম রয়েছে। এই অবস্থায় অভিযুক্তরা জামিন পেলে ছবিটা বদলে যাবে। এমন একজনের নাম সামনে এসেছে, যাঁর রক্ষাকবচ আছে। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিচারক বলেন, নীলাদ্রি টাকা সংগ্রহ করে কুন্তল ও তাপসকে দিয়েছেন বলে সিবিআইয়ের দাবি। কিন্তু কার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন, তা জানা যায়নি। যে ভুয়া নথি তৈরি করা হয়েছে, তা সরকারি কর্মী ছাড়া কীভাবে হয়?
তাপস মণ্ডলের আইনজীবী বলেন, তাপসকে এই মামলায় আর প্রয়োজন নেই। তাঁর সঙ্গে দুর্নীতির যোগাযোগের প্রমাণ মেলেনি। কুন্তল ঘোষের আইনজীবী জানান, নিয়োগপত্র সংক্রান্ত কোনও সুবিধা তিনি নেননি। বলা হচ্ছে, তিনি অতিরিক্ত প্যানেল তৈরি করেছেন। কিন্তু কুন্তল সরকারি কর্মী নন। তাঁর পক্ষে এই প্যানেল তৈরি সম্ভব নয়। বরং যাঁরা এই অতিরিক্ত প্যানেল তৈরি করে নিজেদের পদের অপব্যবহার করেছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করুক সিবিআই। সিবিআইয়ের আইনজীবীর দাবি, কুন্তলই দুর্নীতির কিংপিন। কমিশন নিয়েছেন তিনি। তাপস ও কুন্তল দুর্নীতিতে একসঙ্গেই যুক্ত। সরকারি কর্মীরা সিবিআইয়ের তদন্তের মধে্যই আছে। কুন্তলের সঙ্গে সরকারি কর্মীদের যোগ রয়েছে। অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরকারি কর্মীদের সাহায্যে তাঁদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন কুন্তল। অভিযুক্তরা কাদের কাদের টাকা দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিাইয়ের কাছে প্রমাণ আছে। এবার তাঁদের তদন্তের মধে্য নিয়ে আসা হবে। সিবিআই একটা গোলকে টার্গেট করে এগোচ্ছে। বিচারক বলেন, ‘‘বৃত্তকে সম্পূর্ণ করার জন্য যেটা প্রয়োজন, সেটা করুন।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.