অর্ণব আইচ: টাকার বিনিময়ে চাকরি। দুর্নীতিতে যোগ। পরিবারের নামে থাকা সংস্থার ঠিকানা থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার। এমনই একের পর এক অভিযোগ এনে সোমবার প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করল আদালত। এছাড়াও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, মানিক ভট্টাচার্য, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়ন শীল ও সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন হয়েছে আজ।
এদিন চার্জ গঠনের আগে ইডির বিশেষ আদালতের বিচারক শুভেন্দু সাহা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি দোষী না কি নির্দোষ?”এদিনও পার্থ নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। বলেন, “আমি নির্দোষ। সমস্তটাই কাল্পনিক। বিচারপর্বে প্রমাণ হয়ে যাবে। সব কাল্পনিক। আমি সেটা প্রমাণ করব।” অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠনের শেষে তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্রীয় সংস্থা আমাদের ‘ম্যালাইন’ করছে। কোনও প্রমাণ ছাড়াই চার্জ গঠন হচ্ছে।” এই মন্তব্যের পরই আদালত পার্থকে ভর্ৎসনা করে বলে, “আপনি যা বললেন, তা আদালত অবমাননার সমান। আপনি কীভাবে ভাবলেন যে, আদালত আপনার বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া চার্জ গঠন করেছে?” এদিন জোর করে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে আদালতে ভর্ৎসিত হন মানিক ভট্টাচার্যও। এমনকী, তিনি চুপ না করলে তাঁকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে জানান বিচারক।
প্রসঙ্গত, ইডির প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র অসুস্থ হওয়ার কারণে চার্জ গঠন পিছিয়ে যায়। এখন তিনি ফুলবাগান এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। এদিন হাসপাতাল তাঁর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আদালতে রিপোর্ট পেশ করে। হাসপাতাল থেকেই তাঁকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতে তোলা হয়। বিচারক সুজয়কৃষ্ণকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির যোগ ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষের সঙ্গে যুক্ত থেকে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বেআইনিভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বিচারক জানান, মানিক ভট্টাচার্য প্রাথমিক পর্ষদের প্রধান হিসাবে দায়িত্বে থেকেও দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছেন। তিনি অন্যতম অভিযুক্ত ও অন্যদের সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছেন বলে অভিযোগ। তাপস মণ্ডলের সঙ্গে যুক্ত থেকে অবৈধভাবে চাকরি দিয়েছেন। টাকা গিয়েছে তাঁর ছেলের সংস্থা, স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র তাঁর অফিসে যেতেন ও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে অভিযোগ। তিনি দোষী বা নির্দোষ, তা বিচারক জিজ্ঞাসা করতেই মানিক বলেন, মামলা থেকে অব্যহতির আবেদনের নির্দেশের কপি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি দোষ মানবেন না। মানিক তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য দাবি তোলেন। এর পর মানিক জোর করে আরও কিছু বক্তব্য পেশ করতে গেলে তাঁকে বিচারক ভর্ৎসনা করেন। চুপ করে না বসলে তাঁকে বাইরে বের করে দেওয়ার কথাও বলেন বিচারক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.