গৌতম ব্রহ্ম: উপহার নয়, চাই স্রেফ একটা সই। তা হলেই আমাদের সব পাওয়া হয়ে যাবে।
বউভাতের প্রীতিভোজে দলে-দলে নিমন্ত্রিতরা আসছেন। নবদম্পতি সবাইকে করজোড়ে এই অনুরোধ জানাচ্ছেন। একটা সই শুধু করে দিন এই কাগজে।
পাত্র-পাত্রীর এহেন আবদারে অনেকেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। কোন কাগজে সই করতে বলছে রে বাবা! পরে দেখা গেল, সে কাগজ হল মরণোত্তর অঙ্গদান-দেহদানের অঙ্গীকারপত্র। নবদম্পতি চাইছেন, সংসারজীবনে প্রবেশের দ্বারে প্রিয়জন-পরিজনের সেই মহান শপথই তাঁদের কাছে পাথেয় ও আশীর্বাদ হয়ে থাকুক।
প্রথম সই দু’টিও করেছেন পাত্রপাত্রী। পাইকপাড়ার সৌম্য মিত্র ও মধ্যমগ্রামের তুলিকা বসু। বুধবার পাইকপাড়ায় বউভাতের অনুষ্ঠানে ওঁদের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন ২০জন অভ্যাগত। যাঁদের মধ্যে পাত্রর মা, পাত্রীর বাবা-মাও রয়েছেন। ছ’বছরের প্রেমপর্ব সেরে ৩ ফেব্রুয়ারি সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন সৌম্য-তুলিকা। ছাঁদনাতলায় বসেই অঙ্গদান-দেহদানের পরিকল্পনা ছকে ফেলেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দেন, “কোনও উপহার আনিস না। শুধু একটা কাগজে সই করে দিস।” বাড়ির লোক অবশ্য ব্যাপারটা প্রথমে ভালভাবে নেয়নি। বাধা-বিপত্তি এসেছে। সৌম্যর কথায়, “যৌতুক নেব না উল্লেখ করে আমি কার্ড ছাপিয়েছিলাম। অভিভাবকরা নাকচ করে দেন। নতুন করে কার্ড ছাপিয়ে ফেলেন। ফলে আমার বউভাতে দু’ধরনের কার্ড ছিল। আমি বন্ধুদের আমার ডিজাইন করা কার্ড দিয়েছিলাম। বাবা-মা তাঁদের পছন্দসই কার্ড দিয়েছেন তাঁদের পরিচিতদের।”
তুলিকা-সৌম্যর এই অভিনব উদ্যোগ সাড়া জাগিয়েছে অঙ্গদান নিয়ে কাজ করা মহলে। এগিয়ে এসেছে ‘বেঙ্গল অর্গান ডোনেশন সোসাইটি’। প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে তারাই আগ্রহী আমন্ত্রিতদের স্বাক্ষর করান। বৃহস্পতিবার সৌম্য বলেন, “আমার শাশুড়ি মেঘমালা বসু, শ্বশুর তাপসকান্তি বসু মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন। আমার বাবা কিশোরকুমার মিত্র এখনও সই করেননি। তবে মা গোপা মিত্র করেছেন। আরও অনেক বন্ধু-বান্ধব এদিন অঙ্গীকারপত্রে সই করার আগ্রহ প্রকাশ করে ফোন করেছেন।” সৌম্য-তুলিকার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বেঙ্গল অর্গ্যান ডোনেশন সোসাইটির সভাপতি ক্যাপ্টেন ভি এম স্বামী। তিনি জানান, “দু’দিন আগে ওরা আমাদের পরিকল্পনার কথা জানান। প্রথমে সংকোচ হচ্ছিল। বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে এমন উদ্যোগ তো আগে কখনও হয়নি। আমরা পাঁচজনের একটি টিম গিয়েছিলাম। সবমিলিয়ে খুব ভাল সাড়া মিলেছে। কুড়িজন অঙ্গীকার করেছেন।”
শুধু অঙ্গদানের অঙ্গীকার করাই নয়, নিজেরা ‘অ্যানিম্যাল লাভার’ হওয়ার সুবাদে বিয়ের মেনুতে একটাও নন-ভেজ পদ রাখেননি তুলিকা-সৌম্য। প্রায় ৩০ রকমের পদ ছিল। সৌম্যদের আক্ষেপ, “ডিশগুলি ‘ভেগান’ করতে পারিনি। কয়েকটি মেনুতে দুধ দিয়ে দিয়েছে পাচক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.