নব্যেন্দু হাজরা: “তাপস পালের সব সিনেমা দেখেছি। আমাদের প্রেম হয়েছিল ‘গুরুদক্ষিণা’ দেখতে গিয়ে। আসানসোলের বরাকরের একটা সিনেমাহলে। তারপর থেকে কোনওটা বাদ দিইনি। আর আজ তিনি নেই। শেষবারের মতো একবার দেখতে আসব না আমাদের হিরোকে!” কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন পূর্ণিমাদেবী। শাড়ির আঁচল দিয়ে জল মুছলেন চোখের।
ধানবাদ থেকে ভোরের ট্রেনে কলকাতায় এসেছিলেন স্বামী শক্তিপদ বাউড়ির সঙ্গে। প্রিয় অভিনেতাকে শেষবারের মতো দেখতে। “আজ অফিস যাইনি। মনে পড়ছে সেই প্রথম ‘গুরুদক্ষিণা’ দেখার স্মৃতির কথা। তারপর আর বাদ দিইনি কোনও সিনেমা। হয়তো হিরো হওয়ার কারণেই তিনি রাজনীতিতে এসে দু’-একটা খারাপ কথা বলেছিলেন। ক্ষমাও তো চেয়েছেন। অভিমান করে থেকে কী লাভ? তাই শেষ বিদায় জানাতে এসেছি। যে যা-ই বলুক। তাপস পালের মতো অভিনেতা হয় না”, বললেন পূর্ণিমাদেবী।
বুধবার সকালে মানুষের ভিড় আছড়ে পড়েছিল রবীন্দ্র সদনে। তাঁদের প্রিয় অভিনেতাকে শেষ বিদায় জানাতে। কারও চোখে জল। কেউ বা ভিড় ঠেলে শেষবার দেখার চেষ্টা করছেন ‘সাহেব’কে। প্রত্যেকের মুখেই নানা স্মৃতির কথা। তাপস পালের বড় হয়ে ওঠার গল্প। “যখনই এসেছে পাড়ায়, বাড়িতে এসে খোঁজ নিয়েছে। মাসিমা শরীর ঠিক আছে তো? আর আজ শেষবারের মতো ছেলেটাকে একবার দেখতে আসব না?” ভিড়ের মধ্যেই এক কোণে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন চন্দননগর পালপাড়ার প্রৌঢ়া গীতা সামন্ত। এসেছেন ছেলে ও ছেলের বউয়ের হাত ধরে। ‘সাহেব’কে বিদায় জানাতে। শুধু তিনি নন। রবীন্দ্রসদনে এদিন তাপস পালকে শেষ বিদায় জানাতে চন্দননগর থেকে এসেছিলেন অনেকেই। কেউ দল বেঁধে। আবার কেউ অফিসে বসে খবর পেয়ে সেখান থেকেই চলে এসেছেন এলাকার মানুষকে দেখতে।
এদিন রবীন্দ্র সদনে অভিনেতা তাপস পালের মরদেহ এসে পৌঁছলেই একে একে আসেন টলিউডের কলাকুশীলবরা এবং রাজ্যের মন্ত্রীরা। তবে শুধু তাঁরা নন। এদিন সেখানে হাজির ছিলেন তাঁর বহু অনুরাগী। চন্দননগর থেকে কৃষ্ণনগর সই তালিকায় বাদ ছিলেন না কোনও এলাকার বাসিন্দা। কেউ শেষবারের মতো দেখেছেন, আবার কেউ ভিড়ের চাপে না দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গিয়েছেন। বালিগঞ্জের রিনা পারভিনই যেমন কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখতে পেলেন না প্রিয় হিরোকে। বললেন, “এ আফসোস কখনও যাবে না। সারাজীবন থেকে যাবে। রাস্তায় এত জ্যাম যে, দেখতে পেলাম না।” হাওড়ার ইচ্ছাপুর থেকে দল বেঁধে তাপস পালকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন মানসী বসু, সুজাতা মল্লিক, অপর্ণা মল্লিকরা। ‘দাদার কীর্তি’র শেষ স্মৃতি সম্বল করে ফিরে যান যে যাঁর বাড়ি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.