অর্ণব আইচ: সন্তান দত্তক নিতে গিয়ে শিশু পাচারকারী চক্রের ফাঁদে শহরের এক দম্পতি। উত্তরবঙ্গের ওই চক্রের কাছে তাঁরা প্রতারিতও হয়েছেন বলে অভিযোগ। নিঃসন্তান ওই দম্পতির কোলে শিশুপুত্রকে তুলে দেওয়ার নাম করে প্রায় ২ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু শিশুকে কাছে পেয়ে তাঁরা দেখেন যে সে বিশেষভাবে সক্ষম এবং অসুস্থ। কাশীপুরের বাসিন্দা ওই দম্পতি জলপাইগুড়ির চন্দনা চক্রবর্তী এবং সঞ্জীব নামে দু’জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। আগের একাধিক অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে চন্দনা আপাতত সিআইডি হেফাজতে। সঞ্জীবের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৫ সালে এই ঘটনার সূত্রপাত। কাশীপুরের ওই নিঃসন্তান দম্পতি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য জলপাইগুড়ির একটি সংস্থার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করেন। তাঁরা নিয়ম অনুযায়ী, অনলাইনেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে প্রথমে একটি অ্যাকাউন্টে হাজার টাকা পাঠান। ওই বছরের জুন মাসে সংস্থার চেয়ারপার্সন বলে পরিচয় দিয়ে চন্দনা চক্রবর্তী তাঁর এক সহকারীকে সঙ্গে নিয়ে দম্পতির বাড়িতে ‘হোম স্টাডি’ করতে আসে। তার জন্য ১০ হাজার টাকা নেয়। তাঁরা একটু তাড়াতাড়িই এক পুত্রসন্তানকে নিজেদের কাছে চাইছিলেন। চন্দনা তাঁদের জানায় যে নগদ দেড় লাখ টাকা দিলে তাড়াতাড়ি দত্তক পুত্র পাওয়া সম্ভব। সেইমতো ওই মাসেই সঞ্জীবকে তাঁরা সেই টাকা নগদে দেন।
এরপর কার্যত ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে চন্দনা-সঞ্জীব। আরও টাকা দাবি করে কাশীপুরের ওই দম্পতির থেকে। টাকা না পেলে কোনও শিশুকে দেবে না বলে জানায়। সেইমতো দম্পতি দু’দফায় আরও ৪২ হাজার টাকা দেন। এর পর আগস্ট মাসে তেঘরিয়ার বাসিন্দা এক মহিলার মাধ্যমে একটি শিশুপুত্রকে দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার জন্যও ওই মহিলা তিন হাজার টাকা তাঁদের কাছ থেকে নেয়। প্রথমে দম্পতি শিশুটিকে পেয়ে খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু বছর দেড়েকের শিশুটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি জানান, শিশুটি বিশেষভাবে সক্ষম। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয়। একথা শুনে তাঁরা দিন পাঁচেকের মধ্যে তেঘরিয়ার ওই মহিলার কাছে গিয়ে শিশুটিকে ফেরত দিয়ে লিখিতভাবে তার কারণও জানান।
এবার ওই দম্পতি মত পালটে এক কন্যাসন্তানকে দত্তক নিতে চেয়ে সংস্থার চেয়ারপার্সন চন্দনাকে বলেন। চন্দনা তাতে রাজিও হয়। তাঁদের ৬ মাস অপেক্ষা করতে বলা হয়। ধীরে ধীরে দম্পতির ধারণা হয়, সংস্থাটি তাঁদের প্রতারণা করছে। তাই তাঁরা আর ওই সংস্থাটির কাছ থেকে দত্তক নেবেন না বলে চন্দনাকে জানিয়ে দেন। যে টাকা তাঁরা দিয়েছেন, তা ফেরত দিতে বলেন সঞ্জীবকে।
শিশু পাচার চক্র চালানোর অভিযোগে ২০১৭ সালে চন্দনা সিআইডি‘র হাতে গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন হোম থেকে শিশু পাচারের অভিযোগ ওঠে। এর পিছনে যে একটি আন্তর্জাতিক চক্র রয়েছে, তা-ও জানতে পারে সিআইডি। কাশীপুরের ওই দম্পতি এই খবর পেয়ে সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সিআইডির আধিকারিকরা চন্দনার সঙ্গী সঞ্জীবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। সিআইডি সঞ্জীবের আসল পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। সিআইডি দম্পতিকে ওই সংস্থা এবং চন্দনার সহকারী সঞ্জীবের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন।
এক বছর আগে তাঁরা লালবাজারের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধানকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানান। সেইমতো তাঁদের লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা ডেকে পাঠান। এক গোয়েন্দা আধিকারিক অফিস থেকেই সঞ্জীবকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু সঞ্জীবকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এর পর থেকে গত কয়েক মাস দম্পতিও সঞ্জীবের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত কাশীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.