ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: এ যেন উলটপূরাণ। তদন্ত শেষে দেখা গেল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। “তাহলে এমন অভিযোগ করেছিলেন কেন?” এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিযোগকারী স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে ঢোক গিললেন। সাফ জানিয়ে দিলেন, আমার আর কোনও অভিযোগ নেই।
ঘটনা দিন সাতেক আগের। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে (Whatsapp) একটি মেসেজ ভাইরাল হয়ে যায়। যে মেসেজে এক ব্যক্তি লিখেছেন, “সম্প্রতি একটি দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে গেলাম। আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। ১২ জুলাই ওর ডেলিভারি ডেট ছিল। নিয়ম অনুযায়ী ৯ জুলাই পার্কস্ট্রিটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড টেস্ট করাই এবং তা পজিটিভ আসে।” অভিযোগ, এরপর কোভিড পজিটিভ স্ত্রীর ডেলিভারি করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন ওই ভদ্রলোক এবং তাঁর গোটা পরিবার। ভাইরাল হয়ে যাওয়া সেই মেসেজে লেখা ছিল, ডেলিভারি করাতে মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে গেলে সেখানে কোভিড পজিটিভ অন্তঃসত্ত্বার ডেলিভারি করানোর জন্য ১০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। ভাইরাল হওয়া ওই মেসেজে ব্যক্তি লিখেছিলেন, “এত টাকা দিয়ে ডেলিভারি করানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” মেসেজ ভাইরাল হতেই চারিদিকে ছিছিকার পড়ে যায়। কী করে কোনও হাসপাতাল এত টাকা নিতে পারে? প্রশ্ন তোলেন নেটিজেনরা।
দম্পতির ওই অভিযোগ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে জমা পড়েনি। তবে ভাইরাল হয়ে যাওয়া ওই মেসেজ। কয়েক কোটি মোবাইল ঘুরে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের সদস্যদের মোবাইলেও এসে পৌঁছায়। এরপরই নড়েচড়ে বসে কমিশন। ব্যতিক্রমীভাবে তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ দায়ের করে। যা স্বাস্থ্যনিয়ন্ত্রক কমিশনের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা। কমিশনের সদস্যরা নিজেরাই তদন্ত শুরু করেন। খোঁজ পাওয়া যায় তাঁদের যারা মেসেজটি লিখেছিলেন। মেডিকা (Medica Super Speciality Hospital) কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। এদিকে এমন অভিযোগ শুনে আকাশ থেকে পড়ে মেডিকা। কোভিড পজিটিভের ডেলিভারি করতে ১০ লক্ষ!
মেডিকা গত একমাসের মধ্যে যত কোভিড পজিটিভ রোগীর ডেলিভারি করিয়েছে তাঁর বিল জমা দেয়। দেখা যায় কোনও ক্ষেত্রেই তা ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি নয়। অনলাইনে যোগাযোগ করা হয় অভিযোগকারীদের সঙ্গে। জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনারা যে লিখেছেন মেডিকা ১০ লক্ষ টাকা নিচ্ছে।” ধরা পড়তেই ওই দম্পতি জানান, মেডিকায় তাঁরা আদৌ যাননি। এক ঘনিষ্ঠ মারফত শুনেছিলেন মেডিকা অনেক টাকা নিচ্ছে। তাই…!
এদিকে অযথা এরকম মিথ্যে অভিযোগ চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের সদস্যরা। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিঃশর্তভাবে অভিযোগ ফিরিয়ে নিয়েছে ওই দম্পতি। এই ঘটনাই প্রমাণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল যে সমস্ত অভিযোগ ঘুরছে তার সবটাই সত্যি নয়।
এদিকে এমন ঘটনায় ব্যথিত ডা. কুণাল সরকার। মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান, বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছেন। সেখানে এতবড় একটা অভিযোগ লিখে ছড়িয়ে দেওয়াটা অত্যন্ত ছেলেমানুষী। যাঁরাই কাজটা করেছেন নিতান্ত দায়িত্ব জ্ঞানহীনের মতো করেছেন। তাঁর আশা, এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের জিনিস ছড়াবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.