কলহার মুখোপাধ্যায়: করোনার ছোবল তো উদ্যত ছিলই। এবার বিষ ঝাড়ল লকডাউন। টানা বনধে রোজগারে টান। রবিবার গোটা দিনটা একরকম অভুক্তই কাটাল ৩৯টি দিনমজুর পরিবার। হাঁড়ি চড়ল না একটা ঘরেও। বাচ্চাগুলো খিদের জ্বালায় দিনভর কান্নাকাটি করল। রাতে শুতেও গেল কাঁদতে কাঁদতে। ঘটনাটি খাস বিধাননগরের।
পুরনিগমের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দ পল্লির এই পরিবারগুলি কপাল চাপড়াচ্ছে। আতঙ্কে সিঁটিয়ে গোটা এলাকা। কারণ, এই ওয়ার্ডের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ বিপিএল তালিকাভুক্ত।এই পরিবারের পুরুষদের অধিকাংশ দিনমজুর। মহিলারা লোকের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। গত রবিবার থেকেই কার্যত স্তব্ধ কাজকর্ম। প্রথমে জনতা কারফিউ তারপর লকডাউন। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে রোজগার শূন্য। যৎসামান্য সঞ্চয় যা ছিল এই ক’দিনেই ফুরিয়ে গিয়েছে। শনিবার শেষ টাকা দিয়ে চাল কিনে দু’মুঠো জোগাড় করেছিলেন, রবিবার তাও ছিল না।
এলাকার বাসিন্দা মায়া রাজবংশীর দুই ছেলে। ভেবেছিলেন পাড়ার চেনা মুদির দোকানি ধার দেবেন। দেননি। ফলে বাচ্চাদুটোর জন্য বিস্কুট পর্যন্ত কিনতে পারেননি। রাত পর্যন্ত কেঁদেছে। জীবনে প্রথম বাচ্চাদের খেতে না দিতে না পেরে কেঁদেছেন মায়া আর তার স্বামীও। একই অবস্থা সুমি রায়, সুপ্রিয়া দাস, শুক্লা মণ্ডল, উষারানি মিস্ত্রি, লক্ষ্মী রাজবংশীদের পরিবারেও। এরকম মোট ৩৯টি পরিবার রবিবার থেকে না খেয়েই কাটিয়েছে। সোমবার অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়। পাড়ার কয়েকজনের কানে যায় তাঁদের অবস্থার কথা। তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে চাল, ডাল আর আলু কিনে দেন। তা দিয়ে সোমবার কোনওমতে ক্ষুন্নিবৃত্তি হয়েছে এই পরিবারগুলির। স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব মিস্ত্রি জানিয়েছেন, “নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সামান্য কিছু খাবার কিনে দিয়েছি। বাচ্চাগুলো না খেয়ে ছিল। দেখে খুব খারাপ লাগছিল।” এই পরিবারগুলির কাছে প্রশাসনিক স্তরে কোনও সাহায্য এসে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছে তাঁরা। কবে আসবে তার কোনও প্রতিশ্রুতি এখনও পায়নি বলেই জানিয়েছে পরিবারগুলি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.