অর্ণব আইচ: একেই বলে দুধের বন্যা। কোথাও রাস্তার উপর অ্যালুমিনিয়ামের ক্যানে পড়ে রয়েছে দুধ। আবার কোথাও তা বয়ে চলেছে নর্দমা দিয়েই। প্রত্যেকদিন বড়বাজারের দুধপট্টিতে আসে প্রায় তিন লাখ লিটার দুধ। কিন্তু লকডাউনের সময় কেনার লোক সামান্যই। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা ৬০ টাকা লিটার মোষের দুধ বিক্রি করছেন লিটার প্রতি কুড়ি টাকায়। গরুর দুধ বিক্রি হচ্ছে আরও কম দামে। তাতে মধ্য কলকাতার কিছু বাসিন্দার হয়তো লাভ হচ্ছে, কিন্তু অশনিসংকেত দেখছেন ব্যবসায়ীরা। শহরের দুগ্ধ ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অনুরোধ জানানো হয়েছে, এই বিশাল পরিমাণ দুধ যাতে মাদার ডেয়ারি সংস্থা কিনে নেয়। কারণ একমাত্র এই সংস্থারই ক্ষমতা রয়েছে এত পরিমাণ দুধ একসঙ্গে মজুত করার।
মধ্য কলকাতার গণেশ টকিজের কাছে কলকাতার দুধপট্টি। ভোরবেলা থেকে উত্তরের বারাকপুর, কামারহাটি, ডানকুনি থেকে শুরু করে মেটিয়াবুরুজ, বানতলা-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে গাড়ি করে গরু আর মোষের দুধ নিয়ে আসতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণভাবে সকাল হতে না হতেই দুধপট্টিতে জমা হন সরবরাহকারীরা। সাইকেল, ভ্যান, ছোট মালবাহী গাড়ি করে দুধ নিয়ে চলে যান শহরের মিষ্টির দোকানগুলোতে। এক দুধ ব্যবসায়ী রামশরণ যাদব জানান, কলকাতার মিষ্টির দোকানগুলি তাঁদের মূল খদ্দের। বলা যেতে পারে, যত পরিমাণ দুধ বড়বাজারের এই জায়গাটিতে এসে জমা হয়, তার ৬০ শতাংশই যায় মিষ্টির দোকানে। একইসঙ্গে বিভিন্ন ডেয়ারি তাঁদের কাছ থেকে দুধ কেনে। আবার বড়বাজার থেকেই দুধ কিনে শহরের চায়ের দোকানগুলিতে সরবরাহ করা হয়। বাকি একটি অংশ গৃহস্থদের কাছে পৌঁছয়।
কিন্তু করোনা ভাইরাস রোধে লকডাউনের পর থেকে বন্ধ মিষ্টির দোকান থেকে শুরু করে চায়ের দোকান। যেহেতু ডেয়ারিগুলিতে কর্মচারীরা আসতে পারছেন না, তাই বহু ডেয়ারি কমিয়ে দিয়েছে দুধ কেনার পরিমাণ। আবার অনেক ডেয়ারির নিজস্ব গরু বা মোষ রয়েছে। আর সব মিলিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বড়বাজারের দুধপট্টির ব্যবসায়ীরা। জোড়াসাঁকো দুগ্ধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রাজেশ সিংহ জানান, একসময় যখন কলকাতায় খাটাল ছিল তখন দিনে ৬ লাখ লিটার দুধ এখানে আসত। এখন কিছু না হলেও দিনে প্রায় তিন লাখ লিটার দুধ বড়বাজারে আসে। লকডাউনের পরও তা আসছে। কিন্তু কেনার লোক নেই। দোকানে সরবরাহ হচ্ছে না। বড়বাজার, জোড়াবাগান, জোড়াসাঁকো, পোস্তা, গিরিশ পার্ক এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ এসে দুধ কিনছেন। কিন্তু লকডাউনের ফলে সেই সংখ্যাও কম। যাতে দুধ ফেলা না যায়, তাই বাধ্য হয়ে লিটারপ্রতি কুড়ি টাকায় ছেড়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ হিসাব অনুযায়ী মোষের দুধ এক লিটার তৈরি করতে মোট খরচ হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আনুপাতিক হারে গরুর দুধও। এখন প্রচুর ক্ষতি করে এই দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে, না হলে ফেলে দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কারণ, দুধ বেশিক্ষণ রাখা যায় না।
একইসঙ্গে লকডাউনের পর থেকে পশুখাদ্যের সরবরাহ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। পশুগুলিকে ভাল করে খেতে দেওয়া যাচ্ছে না। অনেক পশুর মালিক বাধ্য হয়ে কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন গবাদি পশু। তার ফলে এমন অবস্থা আসতে পারে, লকডাউনের পর যখন সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তখন কমে যাবে দুধের সরবরাহ। তার ফলে দুধের দাম বেড়ে যেতে পারে অনেক বেশি। রাজেশ সিংহ জানান, তাঁরা চান পুরো বিষয়টিতে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করুক ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.