গৌতম ব্রহ্ম: সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর রক্তরসে (Plasma) নোভেল করোনার চিকিৎসা শুরু করেছে আমেরিকা। একই পথে হাঁটছে ব্রিটেনও। ভারতেও অতি সংকটজনক COVID-19 পজিটিভ রোগীকে প্লাজমা থেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করার ছাড়পত্র দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)। আগ্রহী বাংলাও। কিন্তু প্রশ্ন, রক্ত দেবে কে? এগিয়ে এলেন করোনাজয়ী হাবড়ার তরুণী মনামী বিশ্বাস। স্কটল্যান্ডে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পাঠরত ছাত্রীটি জানিয়ে দিলেন, করোনা চিকিৎসায় তাঁর কোনও ভূমিকা থাকলে তিনি তা অবশ্যই পালন করবেন। দরকার হলে প্লাজমা থেরাপির জন্য দেবেন রক্ত। রক্তদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন করোনা যুদ্ধ জয় করে ফেরা আরও বেশ কয়েকজন। তাঁদের বক্তব্য, শারীরিক কোনও সমস্যা না হলে তাঁরা রক্তদানে প্রস্তুত।
সম্প্রতি বাংলায় ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’ চালুর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসা পদ্ধতির পক্ষে সওয়াল করেন করোনা মোকাবিলায় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য ডা. অভিজিৎ চৌধুরিও। তিনি জানান, করোনাজয়ীদের শরীরে তৈরি হওয়া ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আক্রান্তদের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। এটাই মূল সূত্র। এদিকে, ICMR সূত্রে খবর, ‘কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’ কী পদ্ধতিতে প্রয়োগ হবে, তার বিধি তৈরি করে দেশের ড্রাগ কন্ট্রোল ব্যুরোর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ভেন্টিলেটরে থাকা করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।
কেরলের ‘শ্রীচিত্র তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি’কে পরীক্ষামূলভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইসিএমআরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি’র অধিকর্তা ডা. মনোজ মুখেকর। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনও প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগে ইচ্ছুক রাজ্যগুলির স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং দিল্লিও কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছে।
প্লাজমা থেরাপি অবশ্য অনেক রোগেই ব্যবহার হয়। মূল নীতি হল, যদি কেউ কোনও রোগ থেকে সুস্থ হয়, তাহলে তাঁর রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডি যুক্ত প্লাজমা আক্রান্ত মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ভাইরাসকে মেরে ফেলা। এনআরএস ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগে রক্তের অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা হয়। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ‘ট্রায়াল’ চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে আইসিএমআরের সঙ্গে।
এনআরএস হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রাক্তন ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী জানান, এক্ষেত্রে ব্লাড গ্রুপ ম্যাচিং করাটা জরুরি নয়। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। প্লাজমায় অন্য কোনও জীবাণু থাকলে তা রোগীর শরীরে ঢুকে পড়বে। তাই সংগৃহীত প্লাজমার পাস্তুরাইজেশন, ন্যানো-ফিল্ট্রেশন খুব জরুরি। পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যালের চিকিৎসক ডা. দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, কেমোথেরাপিতে শ্বেতরক্তকণিকা দেওয়া হয়। যাকে ‘গ্র্যানুউলোসাইট ট্রান্সফিউশন’ বলা হয়। এটাও অনেকটা সেই রকম থেরাপি। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি বড় আকারে প্রয়োগ করা মুশকিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.