অভিরূপ দাস: সাতজন নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু টিকা পেলেন না একজনও। বুধবার কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল মোডে মাছি তাড়ালেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ভ্যাকসিনেশন অফিসাররা।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম আর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে বুধবারই শুরু হয়েছে কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল। কোভিশিল্ড যেখানে দেওয়া হয়েছিল সেই কেন্দ্রে নয়, আলাদা ঘরেই শুরু হয় টিকাকরণ।
তবে এক্ষেত্রেও কোভিশিল্ডের মতোই চারজন ভ্যাকসিনেশন আধিকারিক ছিলেন। ঠিক হয়েছিল তিনটি হাসপাতালে নূন্যতম ২০ সর্বোচ্চ একশো জনকে কোভ্যাক্সিনের টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু টিকা প্রাপকদের নামের তালিকা বলছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেই এই টিকা নেওয়ার চাহিদা তলানিতে। দিন শেষে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে টিকা নিয়েছেন মাত্র ৩৫ জন, এসএসকেএম হাসপাতালে মেরেকেটে ১৩ জন। মেডিক্যাল কলেজে সেই সংখ্যাটা শূণ্য। মেডিক্যাল কলেজের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ৭ জন টিকা নেওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু এক একটি ভায়ালে ২০টি করে ডোজ রয়েছে। ৭ জনের জন্য একটি ভায়াল খুললে বাকি ১৩টি ডোজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সংখ্যাটা অন্ততপক্ষে দশ পেরোলেও ভায়াল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতো।
এত ঘটা করে টিকাকরণ শুরু হওয়ার পরেও কেন অনিহা? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, কোভ্যাকসিনের তৃতীয় ফেজ ট্রায়াল সম্পূর্ণ হয়নি। আপাতত তাই এটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল মোডে রয়েছে। এসএসকেএম সুপার রঘুনাথ মিশ্র জানিয়েছেন, কোভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও তার রিপোর্ট বিশ্লেষণ হয়নি। যে কারণে টিকা পেতে গেলে সম্মতি পত্রে সই করতে হচ্ছে। ঠিক যেমনটা ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের করতে হয়েছে। সূত্রের খবর, সে কারণেই চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে টিকা নিতে অনীহা দেখা গিয়েছে। কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এমন অনীহা দেখা গিয়েছিল দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালেও। এর মধ্যেই বুধবার হায়দরাবাদ থেকে রাজ্যে আসছে কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় কনসাইনমেন্ট। দ্বিতীয় দফায় মোট ১৬ হাজার ৪৭২ ভায়াল কোভ্যাকসিন এসেছে রাজ্যে অর্থাৎ ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৪৪০ ডোজ ৷
এদিন সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ দিতে কোভ্যাকসিনের ডোজ নেন সরকারি আধিকারিকরা। এসএসকেএম হাসপাতালে কোভ্যাকসিন নেন রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য, রাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অন্যতম কর্তা সৌমিত্র মোহন, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের এএমডি স্মিতা সান্যাল শুক্লা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের কোভ্যাকসিন নিতে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভ্যাকসিন একটি মৃত বা নিস্ক্রিয় টিকা। এটা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ অনুমোদিত। এই ভ্যাকসিনের গবেষণালব্ধ ফল প্রকাশ না হলেও এটি সুরক্ষিত তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, এদিন ৩৫০টি কেন্দ্রে ১১ হাজার ৭৫০ জনকে কোভিশিল্ডের টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে দু’জনের শরীরে। পিনকোডের গন্ডোগোলের জন্য কিছু প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.