সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: শুধুমাত্র কালীপুজোর রাত নয়। এবার বিসর্জনের দিনগুলিতেও শব্দদৈত্য ও ডিজের তাণ্ডব রুখতে কড়া নির্দেশ দিলেন লালবাজারের পুলিশ কর্তারা। সোমবার থেকেই শুরু হয়ে যাবে কালী প্রতিমা বিসর্জনের পালা। এই পর্ব চলবে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। ওই একই দিন আবার ছটপুজো। সেই কারণে বাজে কদমতলা ঘাট বাদ দিয়ে গঙ্গার যে কোনও ঘাটে বিসর্জন দেওয়া যেতে পারে প্রতিমা। তবে বিসর্জনেও এবার শব্দদৈত্য এবং ডিজের দাপট রুখতে তৎপর হল লালবাজার। সেই কারণে শহরের বিগ বাজেটের পুজোর কালী প্রতিমাগুলিকে বিসর্জনের জন্য গঙ্গায় নিয়ে আসা হবে পুলিশি নিরাপত্তায়।
এই ‘এসকর্ট’-এর দায়িত্বে থাকবেন একজন করে এসি। অর্থাৎ, পুলিশের এই কড়া নজরদারির ফলে এবার আর তারস্বরে ডিজে বাজিয়ে এবং নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটিয়ে শহরে কালী প্রতিমা বিসর্জন করা যাবে না। গঙ্গার এক-একটি ঘাটে একজন করে ডিসির নেতৃত্বে থাকছে পুলিশ। নিমতলা ঘাটে থাকবেন দু’জন ডিসি। বিসর্জনের জন্য রিভার ট্রাফিকের ৪টি টহলদারি লঞ্চ থাকছে। ঘাটগুলিতে থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। লালবাজার কন্ট্রোলরুমে থাকবেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পুরসভা এবং দমকলের আধিকারিকরা। সেইসঙ্গে কালীঘাট থেকে শুরু করে লেক কালীবাড়ি এবং ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি-সহ প্রতিটি মন্দিরেও বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, শব্দদানবের তাণ্ডব রুখতে শনিবার বিকেল থেকেই শহরের অলিতে-গলিতে সাদা পোশাকে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। শব্দদানবকে জব্দ করতে এবার এই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। তাই তাঁর নির্দেশেই পুলিশ কর্মীরা অলিতে-গলিতে নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেন। এরজন্য পুলিশের গাড়ি তাঁরা ব্যবহার করছেন না। শহরের সরু গলিগুলিতে যাতে সহজেই প্রবেশ করা যায়, তার জন্য ১১৪টি অটো এবং ১৮টি টাটা সুমো ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ওই সমস্ত অটো ও টাটা সুমোয় চেপেই শব্দদানবের তাণ্ডব রুখবে পুলিশ। এক-একটি অটোতে থাকছেন দু’জন করে কনস্টেবল। প্রতিটি টাটা সুমোয় থাকছেন চারজন করে পুলিশ।
প্রতি বছর পুলিশ আবাসনগুলি থেকেই নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোর গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ আসে। তাই ওই সমস্ত পুলিশ আবাসনেও শব্দদানবের তাণ্ডব রুখতে এবার আরও কড়া মনোভাব নিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। সেই কারণে পুলিশ আবাসনগুলির কাছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ব্যবহার না করার জন্য বিশেষ বার্তা দিয়েছেন তিনি। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (সদর) জাভেদ শামিম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আইন সকলের ক্ষেত্রেই সমান। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলে পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন? আমরা পুলিশ আবাসনগুলিতে শব্দবাজি ব্যবহার না করার জন্য বার্তা পাঠিয়েছি। তার অমান্য করলে আবাসনের পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া শহরে কোথাও শব্দবাজি ব্যবহার হলে কড়া ব্যবস্থা নেব আমরা।”
আজ, রবিবার থেকেই প্রতিটি ডিভিশনে থাকছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। অ্যাম্বুল্যান্স থাকছে ১০টি। ১৪টি ট্রমা কেয়ার থাকছে। ওয়াচ টাওয়ার থাকছে ২৭টি। থাকছে সিসিটিভি। কুইক রেসপন্স টিম থাকছে ২১টি। হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড থাকছে ১৮টি। রাতের দিকে এই স্কোয়াড বিভিন্ন এলাকায় টহলদারি চালাবে। আজ পথে নামছেন প্রায় ৫০০০ পুলিশ কর্মী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.