সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: এবার আর শুধুমাত্র শহরের রাজপথ নয়। শব্দদানবের তাণ্ডব রুখতে এবার শনিবার বিকেল থেকেই শহরের অলিতে-গলিতে সাদা পোশাকে কড়া নজরদারি চালাবেন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। শব্দদানবকে জব্দ করতে এবার কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। তাই তাঁর নির্দেশেই পুলিশ কর্মীরা সাধারণ মানুষের পোশাক পরেই প্রায় ছদ্মবেশে অলিতে-গলিতে নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নামবেন। এর জন্য পুলিশের গাড়ি তাঁরা ব্যবহার করবেন না। শহরের সরু গলিগুলিতে এই বিশেষ অভিযানের জন্য ১১৪টি অটো এবং ১৮টি টাটা সুমো ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ওই সমস্ত অটো ও টাটা সুমোয় চেপেই শব্দদানবের তাণ্ডব রুখবে পুলিশ। এক-একটি অটোতে থাকবেন দু’জন করে কনস্টেবল। প্রতিটি টাটা সুমোয় থাকবে চারজন করে পুলিশ।
প্রতি বছর পুলিশের আবাসনগুলি থেকেই নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানোর গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ আসে। তাই ওই সমস্ত পুলিশ আবাসনেও শব্দদানবের তাণ্ডব রুখতে এবার আরও কড়া মনোভাব নিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। সেই কারণে পুলিশ আবাসনগুলির কাছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ব্যবহার না করার জন্য বিশেষ বার্তা দিয়েছেন তিনি। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (সদর) জাভেদ শামিম পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আইন সকলের ক্ষেত্রেই সমান। নিষিদ্ধ শব্দবাজি ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলে পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন? আমরা পুলিশ আবাসনগুলিতে শব্দবাজি ব্যবহার না করার জন্য বার্তা পাঠিয়েছি। সেই বার্তা না মানা হলে আবাসনের পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া শহরে কোথাও শব্দবাজি ব্যবহার হলে কড়া ব্যবস্থা নেব আমরা।” এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এবারের কালীপুজোয় নির্দিষ্ট ফাঁকা জায়গায় বাজি ফাটানো হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন লালবাজারের পুলিশকর্তারা। এর জন্য শহরের সমস্ত ডিভিশনের ডিসিদের লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (অপরাধ) মুরলীধর শর্মা। এই বৈঠকে তিনি ডিসিদের জানিয়ে দেন, “প্রতিটি ডিভিশনের তিন থেকে চারটি নির্দিষ্ট ফাঁকা জায়গা ঠিক করতে হবে। তা পার্কই হোক, কিংবা ফাঁকা মাঠ। সেইসমস্ত ফাঁকা জায়গায় আজ রাতে বাজি ফাটাবেন বিভিন্ন থানা এলাকার মানুষ।” এর জন্য এলাকায়-এলাকায় প্রচারও চালায় পুলিশ।
সেই সঙ্গে এবার ডিজে রুখতে আরও কড়া হয়েছেন পুলিশকর্তারা। এমনকী বিসর্জনেও ডিজে ব্যবহার এবং শব্দবাজি ফাটানো যাবে না। সেই কারণে এবার প্রতিটি বড় কালীপুজো বিসর্জনের সময় একজন এসির নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী থাকবে। তারাই প্রতিমাকে এসকর্ট করে গঙ্গার ঘাটের দিকে নিয়ে যাবে। গঙ্গার এক-একটি ঘাটে একজন করে ডিসির নেতৃত্বে থাকছে পুলিশ। নিমতলা ঘাটে থাকবেন দু’জন ডিসি।
প্রতিটি ডিভিশনে থাকছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। অ্যাম্বুল্যান্স থাকছে ১০টি। ১৪টি ট্রমা কেয়ার থাকছে। ওয়াচ টাওয়ার থাকছে ২৭টি। থাকছে সিসিটিভি। কুইক রেসপন্স টিম থাকছে ২১টি। হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড থাকছে ১৮টি। রাতের দিকে এই স্কোয়াড বিভিন্ন এলাকায় টহলদারি চালাবে। আজ পথে নামছেন প্রায় ৫০০০ পুলিশ কর্মী। বিসর্জনের জন্য রিভার ট্রাফিকের ৪টি টহলদারি লঞ্চ থাকছে। ঘাটগুলিতে থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। আজ বিকেল থেকেই লালবাজার কন্ট্রোলরুমে থাকবেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পুরসভা এবং দমকলের আধিকারিকরা। সেইসঙ্গে কালীঘাট থেকে শুরু করে লেক কালীবাড়ি এবং ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি-সহ প্রতিটি মন্দিরেও বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ছবি: পিন্টু প্রধান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.