ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন বাংলাদেশি জঙ্গির (Terrorist) সঙ্গে হুজি ও আল কায়দা যোগ। তাদের জিনিসপত্র তল্লাশি করে উদ্ধার হয়েছে একটি ডায়েরি। ওই ডায়েরি থেকে অন্তত ২০ জনের নাম ও ফোন নম্বর মিলেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন জঙ্গি সংগঠন হরকত উল জিহাদ আল ইসলামি বা হুজি, আল কায়দা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট বা আকিস এবং আনসারুল বাংলা টিম বা এবিটির নেতা। আকিস ও এবিটি নামে দু’টি সংগঠনই আল কায়দার সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে এখন জামাত উল মুজাহিদিন (বাংলাদেশ) বা জেএমবির সঙ্গে সঙ্গে এবিটি, হুজি ও আকিস সংগঠন যথেষ্ট সক্রিয়। সূত্রের খবর, ধৃতদের ডায়েরি থেকে মিলেছে জেএমবি নেতা নাহিদ তসনিম, জেএমবি তথা হুজি নেতা আল আমিনের নম্বর। ওই দুই জঙ্গি নেতা এখন বাংলাদেশের কাশিমপুরের জেলে রয়েছে। জেলে বসেই তারা এই জঙ্গিদের চোরাপথে ভারতে ঢোকার নির্দেশ দেয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, গত এপ্রিলের শেষ থেকেই দফায় দফায় মালদহ, মুর্শিদাবাদের সীমান্ত পেরিয়ে এই রাজ্যে আসে অন্তত ১৫ জন জেএমবি (JMB) জঙ্গি। তাদের মধ্যে কয়েকজন গিয়েছে ওড়িশায়। কয়েকজন জম্মু ও কাশ্মীরে। সেখান থেকে তারা পাকিস্তানে কোনও প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছে কি না, গোয়েন্দারা তা জানার চেষ্টা করছেন। মে মাসের প্রথমে সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে কলকাতায় আসে মেকাইল খান। যদিও সে নিজেকে শেখ সাব্বির বলে পরিচয় দিয়েই হরিদেবপুরে বাড়ি ভাড়া নেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার নামেই দু’টি অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে, যার মাধ্যমে চলছে জেএমবির নাশকতার প্রচার। জুনের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসে হুজি তথা জেএমবি নেতা আল আমিনের ভায়রা ভাই নাজিউর রহমান পাভেল। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছ থেকে কলকাতার গোয়েন্দারা তাদের ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে পেরে হরিদেবপুরে হানা দেন।
গোয়েন্দাদের মতে, বাংলাদেশে (Bangladesh) জেএমবি একটি ‘রবারি উইং’ তৈরি করে। তাদের মূল কাজ হচ্ছে গয়নার দোকান ও বড় কোনও দোকানে ডাকাতি করে জঙ্গি সংগঠনের তহবিল বাড়ানো। ধৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে আনোয়ার আলি ওরফে হৃদয়, আবু সালে, হাফিজুল শেখ ওরফে সকাল, তাঞ্জিল বাবু, সোহেল ও আরও কয়েকজনের নাম। এই কয়েকজন জেএমবির ওই ‘রবারি উইং’য়ের সদস্য। তাদের কাছ থেকে বডার্র গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) থেকে বরখাস্ত হওয়া জওয়ান তথা জঙ্গি নেতা পাভেল, রবিউল ও মেকাইল ডাকাতিরও প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে অভিযোগ পুলিশের। ফলে কলকাতায় তারা ডাকাতির ছকও কষত বলে অভিযোগ। গোয়েন্দারা জেনেছেন, কলকাতা থেকে অন্য রাজ্য, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার ছক ছিল তাদের। এ ছাড়াও তারাও জম্মু ও কাশ্মীর হয়ে পাকিস্তানে গিয়ে নাশকতার প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, রবিবার হরিদেবপুর (Haridevpur) থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে ওই তিন জেএমবি জঙ্গি। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ও লিফলেটের মাধ্যমে জেএমবি জঙ্গিরা নাশকতার প্রচারের জন্য নতুন স্লোগান দেওয়া শুরু করেছে। তারা লিখেছে, “বাংলার মায়েদের প্রত্যেকটি রান্নাঘরে বোমা রাখা হোক।” গোয়েন্দাদের দাবি, নাশকতার জন্য খাগড়াগড়ের আদলেই যাতে জেএমবি সদস্যরা ঘরের ভিতর গ্রেনেড ও বোমা তৈরি করে, তার জন্যই উসকানিমূলক স্লোগান তৈরি করেছে জঙ্গিরা। ওই বিস্ফোরক দিয়ে তারা নাশকতা করবে বাংলাদেশ ও ভারতে। সেই কারণেই তারা এই রাজ্যের তরুণদের এই নতুন স্লোগান দিয়েই মগজধোলাই করতে শুরু করেছিল।
এমনকী, কলকাতার উপকণ্ঠে বসে তারা বিস্ফোরক সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও ছক কষে। ফল ও মশারি ফেরি করার নামে কলকাতার দক্ষিণ শহরতলির হরিদেবপুর, ঠাকুরপুকুর, বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে শুরু করে জেএমবির প্রচার। তারা জেহাদি লিফলেট বিলি করেছিল কি না, তা জানতে তিন জঙ্গিকেই জেরা করছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) (STF)। সোমবার তিন জেএমবি বাংলাদেশি জঙ্গি নাজিউর রহমান পাভেল ওরফে জয়রাম ব্যাপারী ওরফে জোসেফ, মেকাইল খান ওরফে শেখ সাব্বির ও রবিউল ইসলামকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। তাদের পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। তাদের ২৬ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.