প্রতীকী ছবি।
অর্ণব আইচ: এ যেন রূপকথার ভূতুড়ে বাড়িতে ‘রাক্ষসে’র বাস। সেই ভূতুড়ে বাড়ির ‘রাক্ষস’ অনেক রাত পর্যন্ত মদ্যপান করে। তাঁর নেশা, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি দেখা। একই সঙ্গে শিশুকন্যাদের উপর ছিল তার নজর। জোড়াবাগানে (Jorabagan) নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের (Rape) পর খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে বহুতলের কেয়ারটেকার রামকুমার। আর তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইলে ভরতি চাইল্ড পর্নোগ্রাফি ও ব্লু ফিল্ম। জানা গিয়েছে, এর আগেও পাড়ার যে নাবালিকারা রাতে ওই বাড়ির কাছে খেলত, তাদের ডেকে কথা বলার চেষ্টা করত সে। সেই ব্যাপারটি আগেও বাড়ির লোকেদের বলেছিল কয়েকজন নাবালিকা। তাই তাদের ‘ভূতের বাড়ি’ বলে ভয় দেখিয়ে দূরে থাকতে বলা হত। এই নাবালিকাদের গোপন জবানবন্দি নিতে পারে আদালত।
অভিভাবকদের চিহ্নিত করা ভূতের বাড়িতে যে সত্যিই ‘রাক্ষস’ থাকে, তা বোঝা গেল মেয়েটির উপর নির্মম অত্যাচার করে তাকে খুনের পর। তাই শুক্রবার পাড়া-প্রতিবেশীরা দাবি করেন, রামকুমারকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কারণ, নিখোঁজ হওয়ার পর অনেক রাতে বহুতলটির সামনে গিয়ে মেয়েটির মামার বাড়ির সদস্যরা তার খোঁজ করছিলেন, তখন সে বলে, ভিতরে কেউ নেই। গেট বন্ধ করা আছে। ঘটনার পর কিছুক্ষণ গলিতে ঘোরাঘুরি করেছিল সে। তারপর বাড়ির ভিতর ঢুকে নিশ্চিন্তে ঘুম দেয় রামকুমার।
আবার ঘটনার পরের দিন সকালে যখন মেয়েটির গলা কাটা দেহ উদ্ধার করা হয়, তখনও নির্লিপ্ত ছিল রামকুমার। নিজেই পুলিশকে নিয়ে যায় সিঁড়ির উপর ঘটনাস্থল দেখাতে। যখন লালবাজারের এক পুলিশকর্তা সকালে তাকে বহুতলে জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তখন খুব শান্তভাবেই উত্তর দেয় রামকুমার। দিনের বেলায় যে সংস্থায় কাজ করে, সেখানে কাজও করতে যায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে পাড়ার লোকেদের সঙ্গে কথা বলে মেয়েটির মৃত্যুতে দুঃখপ্রকাশ করে সে। বিকেলে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর তাকে একটি স্কুটারে করে দু’জন পুলিশকর্মী বাড়িটি থেকে থানায় নিয়ে আসেন। থানা চত্বরে স্কুটার থেকে নামার পরও তার মুখে ছিল অনাবিল হাসি।
শুক্রবার রাতেও লালবাজারে জেরার সময় তার আচরণ স্বাভাবিকই ছিল। জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫ বছর ধরে এই বহুতলের কেয়ারটেকার হিসাবে কাজ করত সে। পরিবার ঝাড়খন্ডে থাকলেও এখানে বহুতলটির একতলার একটি ঘরে একাই থাকত সে। যদিও কিছুদিন আগেও তার স্ত্রী ও কন্যা এসে কয়েকদিনের জন্য থেকে গিয়েছিলেন জোড়াবাগানে এই বহুতলে। এদিন সকালে রামকুমারের গ্রেপ্তারির খবর এলাকায় আসতেই ক্ষোভের সঙ্গে সঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। মেয়েটির সঙ্গে যে চার নাবালিকা খেলা করছিল, তাদের মধ্যে একজন জোড়াবাগানে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকে। তার আসল বাড়ির হাওড়ায়। এদিন তার বাবা এসে তাকে আতঙ্কে হাওড়ায় নিয়ে গিয়েছেন। অন্য এক নাবালিকার বাবা হাসপাতালে শয্যাশায়ী। তার মা দিনের বেশিরভাগ সময় হাসপাতালেই কাটান। মেয়ে থাকে অন্য আত্মীয়দের কাছে। তিনি মেয়েটিকে ঘরের বাইরে বের হতে বারণ করেছেন। আরও দুই নাবালিকার মা বাড়িতেই থাকেন। কিন্তু তাঁরাও মেয়েদের আগলে রেখেছেন। বলেছেন, আগের মতো বাইরে গিয়ে খেলতে হবে না।
যদিও পাড়ার লোকেরা একদিকে নিশ্চিত যে, ‘রাক্ষস’ রামকুমার গ্রেপ্তার হয়েছে। পাড়ার কয়েকজন রামকুমারের সঙ্গে মিশতেন। তাঁরাও ‘বন্ধু’র এই আচরণে হতবাক। খুনের পরের দিন তাঁদের সঙ্গেও যে স্বাভাবিক ব্যবহার করেছে ওই ‘খুনি’। এই ঘটনার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে নারী ও শিশু সুরক্ষা কমিশন। নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর রামকুমারের এই আচরণের ব্যাপারে মনস্তত্ত্ববিদদের সঙ্গে আলোচনা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.