দীপঙ্কর মণ্ডল: সায়েন্স-আর্টসের দ্বন্দ্বে উচ্চশিক্ষার দরজা আপাতত বন্ধ হয়ে গেল বিচারাধীন বন্দির। সংশোধনাগার থেকে মাধ্যমিক দিয়ে ৮৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন শালবনি স্কোয়াডের মাওবাদী নেত্রী তারা ওরফে ঠাকুরমণি মুর্মু। আদিবাসী সমাজের প্রথম প্রজন্মের ছাত্রীর মেধা চমকে দিয়েছে সবাইকে। উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কারা কর্তৃপক্ষের সাফ জানিয়ে দিয়েছে, উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া যাবে না। কারণ সায়েন্স নিয়ে পড়লে বাইরে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে যেতে হবে। পরীক্ষার্থীর সঙ্গে মহিলা পুলিশ পাঠাতে হবে। সেই পরিকাঠামো নেই।
[চরমে অ্যাপ ক্যাব দৌরাত্ম্য, এবার শিকার পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত]
একসময় জঙ্গলমহলে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দাপিয়ে বেড়াতেন তারা। তিনি রাজ্যের মাওবাদী মিলিটারি কমিশনের রাজ্য সম্পাদক মনসারাম হেমব্রম ওরফে বিকাশের স্ত্রী। পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ দম্পতি ছিলেন বিকাশ-তারা। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইলের ওসি অপহরণ, শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হামলা-সহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত এই দম্পতি। ধরা পড়ার পর দু’জনকে আলাদা জায়গায় রাখা হয়। এখন দমদম সেন্ট্রাল জেলে আছেন তারা। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রথমে দিকে জেলের পরিবেশ একেবারেই মানিয়ে নিতে পারছিলেন না তিনি। অস্থির হয়ে ওঠেছিলেন। ক্রমাগত কাউন্সেলিং-এ ধীরে ধীরে এই মাওবাদী নেত্রীর মনেও পরিবর্তন আসে।আগ্নেয়াস্ত্র ধরা হাতেই ছবি আঁকতে শুরু করেন তারা। দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে মাধ্যমিক পরীক্ষাও দেন। মাধ্যমিকে ৮২.৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন তারা ওরফে ঠাকুরমণি মুর্মু। একসময়ের মাওবাদী নেত্রী বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু স্রেফ মহিলা পুলিশকর্মীর অভাবে বিচারাধীন এই বন্দিকে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে দিতে রাজি নয় দমদম সেন্ট্রাল জেল কর্তৃপক্ষ। পড়তে চেয়ে গত সপ্তাহে অনশনে বসেছিলেন তারা। শেষপর্যন্ত দাবি বিবেচনার আশ্বাসে অনশন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি।
উচ্চমাধ্যমিকে কি বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে পারবেন একদা মাওবাদী স্কোয়াডের নেত্রী তারা ওরফে ঠাকুরমণি মূর্ম? কারা দপ্তর এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে খবর। কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের বক্তব্য, “আমরা বন্দিদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহ দিই। কিন্তু তারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চান। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে তাঁর সঙ্গে মহিলা পুলিশ পাঠাতে হবে। আমাদের এত পরিকাঠামো নেই। তাই ওঁকে আর্টসে পড়ার অনুরোধ করছি।” এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কারামন্ত্রী ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। এর আগেও সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্র পৌঁছতে না পারায় নেট-এ বসা হয়নি মাওবাদী নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দামের। কারাদপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে প্রেসিডেন্সি জেলে অনশনে বসেছিলেন তিনি।
[ চা পাতার আড়ালে মাদক ঢুকছে শহরে, ফাঁস ‘খট’ পাচারচক্র]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.