ছবি: প্রতীকী
কলহার মুখোপাধ্যায়: স্কুলপড়ুয়াদের ট্যাব বা স্মার্ট ফোন (Smart Phone) কেনার টাকা উপযুক্ত খাতে ব্যয় হয়েছে কি না, যাচাই করতে কড়া পদক্ষেপ নিল সমগ্র শিক্ষা মিশনের। চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে উপযুক্ত বিল চেয়ে নিয়ে স্কুলকে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট (ইউসি) জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
উল্লেখ্য ট্যাব ও স্মার্ট ফোন কেনার টাকা পাওয়ার পরও অনেকে তা না কিনে নকল বিল বা ভাউচার তৈরি করে জমা দিয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে বিভিন্ন জেলায় থেকে। এই প্রবণতা কড়া হাতে আটকাতে স্কুলগুলিকে বাড়তি তৎপরতা দেখাতে নির্দেশ দপ্তরের। আর গোল বেঁধেছে এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর থেকেই। শিক্ষকদের একটি সংগঠন এই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিতে পাল্টা ইমেল করেছেন শিক্ষা দপ্তরে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য, ট্যাব বা ফোন কেনার সরকারি টাকা এসে ঢুকেছে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। ঠিক যেমনভাবে কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী বা প্রি এবং পোস্ট ম্যাট্রিকের টাকা সরাসরি ঢোকে ছাত্রছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে। ওই অনুদানগুলির হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে স্কুলের কোনও দায়িত্ব থাকেনা। সরকার এবং উপভোক্তার মধ্যে সরাসরি আদানপ্রাদন হয়। অথচ ট্যাবের টাকার ক্ষেত্রে স্কুলকে ইউসি দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি অবাস্তব। ট্যাব বা ফোন কেনার বিল বা ভাউচার আসল না নকল তা যাচাই করার উপায় স্কুল প্রধানদের নেই। “কোন প্রমাণের উপর ভিত্তি করে নকল চিহ্নিত করা হবে তার কোনও গাইডলাইনও স্কুলের কাছে নেই। এই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বিল যাচাই করে বাস্তবসম্মত ইউসি তৈরি করা একপ্রকার অসম্ভব।” জানিয়েছেন অ্যাডভান্সড সোসাইটি অফ হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি।
অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনও এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। সংগঠনের চন্দন গরাই জানিয়েছেন, অরিজিনাল বিল/ভাউচার ছাত্র ছাত্রীরা দিতে ইচ্ছুক নয় কারন ট্যাব/স্মার্ট ফোনে কোনও সমস্যা হলে তা সারাই করতে বা বদল করার জন্য অরিজিনাল বিল লাগবে। তাছাড়া অনেকে আগেই ট্যাব বা স্মার্ট ফোন কিনেছিল, সেই সব পুরোনো বিল জমা হচ্ছে। অনেকেই টাকা প্রাপ্তির পর বিল জমা দিচ্ছেনা বা যোগাযোগ ও করছে না, এক্ষেত্রে বিদ্যালয়গুলির করনীয় কী এই বিষয়ে নির্দেশিকা দেওয়া হোক।
স্কুল প্রধানদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্যের সমস্ত প্রধান শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ করি আপনারা বিষয়টা অনুধাবন করে এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়ে আগামী দিনে ইউসি জমা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সংগঠন আপনার পাশে আছে। আমরা বিষয়টি রাজ্যগতভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় চিঠি দিয়ে এর প্রতিবাদপত্র রূপে জানাবো এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকব। আশা করি আপনারা বিষয়টি উপলব্ধি করে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ রাজ্য সমগ্র শিক্ষা মিশন দপ্তরের নির্দেশানুসারে রাজ্যের সকল বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের জন্য যে দশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল তার ইউসি প্রতিটি প্রধান শিক্ষককে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ডিআই অফিসে দ্রুত জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশিকা জারি হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.