সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনির্মাতা আনন্দ পট্টবর্ধনের ‘রাম কে নাম’ তথ্যচিত্র প্রদর্শনী নিয়ে জটিলতা আরও বাড়ল। আজ, সোমবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কাহিনি অবলম্বনে আনন্দ পট্টবর্ধনের এই তথ্যচিত্র দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু রবিবার বিকেলেই প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ জানায়, ছবিটি দেখানো যাবে না। তাতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি উসকে উঠতে পারে। অভিযোগ, কার্যত হুমকির সুরেই কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশ পৌঁছেছিল আয়োজকদের কাছে। যদিও রাতের দিকে প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়ে দেয় যে তাদের তরফে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি।
সোমবার সকাল হতে না হতেই ফের ‘রাম কে নাম’ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আয়োজক পড়ুয়াদের দাবি, মৌখিকভাবে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সেই অনুমতি সাপেক্ষেই তাঁরা ছবিটি দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন। তাহলে রাতারাতি এই নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী? এই প্রশ্ন তুলে তথ্যচিত্র দেখানোর পক্ষে জোরদার সওয়াল করছেন আয়োজকরা। এর আগে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছবিটি প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
কিন্তু জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তথ্যচিত্র ‘রাম কে নাম’-এ এমন কী তুলে ধরা হয়েছে যে তা দেখানো নিয়ে হায়দরাবাদ কিংবা প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষের এত আপত্তি? জানা গিয়েছে, ১৯৯২ সালে ভারতের ইতিহাসের কলঙ্কিত ঘটনা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রেক্ষাপটে তৈরি তথ্যচিত্রে হিন্দুত্ববাদ বিরোধী একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। লালকৃষ্ণ আডবানীর রথযাত্রা থেকে শুরু করে বাবরির জায়গায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বহিন্দু পরিষদের প্রচার, প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে নাথুরাম গডসের হাতে গান্ধীজির মৃত্যুর বর্ণনাও। সবমিলিয়ে, হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করার মতো যথেষ্ট উপাদান এই তথ্যচিত্রে রয়েছে বলে অভিযোগ কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের। কিন্তু প্রেসিডেন্সির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে ধর্মীয় অন্ধতার বিন্দুমাত্র জায়গা নেই, যেখানে বরাবর আধুনিকতার আলোয় নিজেদের গড়ে তোলেন ছাত্রছাত্রীরা, সেখানে কেন এই হুঁশিয়ারির সুরে নিষেধাজ্ঞা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। এই সিদ্ধান্তে পড়ুয়াদের পাশাপাশি বিস্মিত হয়েছেন নাগরিক সমাজের বিশিষ্টরাও।
তবে পড়ুয়াদেরই একাংশের ধারণা, বেশ কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল, প্রেসিডেন্সির অন্দরে গৈরিকীকরণের একটা প্রভাব পড়ছে। ‘রাম কে নাম’ তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় তা স্পষ্ট হল। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা ছবি প্রদর্শনী নিয়ে কোনও মতামতই দেননি। তাহলে কি প্রদর্শনীর প্রাথমিক অনুমতিটুকুও মেলেনি? এই প্রশ্নের উত্তরে আয়োজকদের জোরদার দাবি, মৌখিক অনুমতি শুরুতেই মিলেছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। বেশ কয়েক বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও সৈয়দ আলি শাহ গিলানির বক্তব্য রাখা নিয়ে এমনই একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সেখানে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে দুপক্ষের মধ্যে রীতিমতো সংঘর্ষ বেঁধে গিয়েছিল। আজ প্রেসিডেন্সিতে কী পরিস্থিতি হতে চলেছে, সেদিকে নিশ্চিতভাবেই নজর থাকবে মহানগরবাসীর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.