রাহুল চক্রবর্তী: বাউন্ডারি হাউজ, ক্রিকেটফিল্ড রোড, মিডলসেক্স, ইউকে-এমএসআর আইটি কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এখন বাংলা রাজনীতির দুর্ভেদ্য ময়দানে। সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ঘুরে দক্ষিণ কলকাতায়। প্রার্থী জাতীয় কংগ্রেসের। সৌন্দর্য আর পেশাগত সাফল্যে কংগ্রেসের প্রার্থীতালিকায় ‘গ্ল্যামার কুইন’ মিতা চক্রবর্তী।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পড়াশোনা। ফিজিক্স অনার্স নিয়ে যোগমায়াদেবী কলেজ থেকে উত্তরণ। পরে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে বি-টেক কম্পিউটার সায়েন্স। টিসিএসে চাকরি দিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে পেশাগত জীবন শুরু। সেই সূত্রেই দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে পা রাখা। কর্মজীবন কাটিয়েছেন সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ডের একাধিক সংস্থায়। পরবর্তীতে নিজেই তৈরি করলেন আইটি কোম্পানি। বর্তমানে যার ম্যানেজিং ডিরেক্টরও। কলকাতা, দিল্লি, লন্ডনে অফিস। কর্মসূত্রে বছরের অনেক সময়ই দেশের বাইরে কাটাতে হয়। এবার তাঁকেই দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী হিসাবে নিয়ে এল কংগ্রেস। রাজনীতিতে এখনও তিনি পরিচিত মুখ নন। বছর দেড়েক আগে শশী থারুরের ‘প্রফেশনাল কংগ্রেস’ দিয়ে হাতেখড়ি। তারপর প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বে।
দেখতে সুন্দর। বাংলা-হিন্দি-ইংরেজিতে অনর্গল কথা বলতে পারা মাঝবয়সি মিতা চক্রবর্তীই এখন শুধু কংগ্রেস শিবিরেই নয়, সব রাজনৈতিক মহলেই আলোচনার মুখ হয়ে উঠেছেন। কংগ্রেসের প্রকাশিত ৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে মিতাকে কেন্দ্র করেই এখন যাবতীয় আলোচনা। মিতার কথায়, “গ্ল্যামারটা কমপ্লিমেন্ট হিসাবে নিই। আর ধন্যবাদ বলে মাথা থেকে বের করে দিতে চাই।” কংগ্রেসে যোগদানের পিছনে পারিবারিক সূত্রটাও আছে। মিতা জানিয়েছেন, “বাবা তপন চক্রবর্তী কংগ্রেসের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। আমার পিসি কংগ্রেস নেত্রী মায়া ঘোষ। পারিবারিক সূত্র যেমন আছে, তেমনই কংগ্রেসের প্রতি আবেগ-ভালবাসা থেকে রাজনীতিতে আসা। কংগ্রেসের আদর্শে আমি বিশ্বাসী।” মঙ্গলবার বারবেলায় কালীঘাটে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেছেন দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী।
এই আসনটি তৃণমূল রাজনৈতিক শক্তির পোক্ত জমি, তা একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন মিতাও। তাই কঠিন লড়াইয়ে প্রচারের সব মাধ্যমকে ব্যবহার করে কংগ্রেসের কথা তুলে ধরতে চান মিতা। মনে করেন, “দক্ষিণ কলকাতা একটা সময় কংগ্রেসের গড় ছিল। আজ তা তৃণমূলের। ফলে আমার লক্ষ্য কংগ্রেসকে শক্তিশালী করা।” কিন্তু কোন সূত্রে দক্ষিণ কলকাতার মতো কঠিন আসনে তাঁকে প্রার্থী করা হল, প্রশ্নটা তুলেছেন কংগ্রেসের কর্মীরাই।
দক্ষিণ কলকাতার দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রদীপ প্রসাদ সরাসরি বিরোধিতা করেছেন মিতা চক্রবর্তীকে নিয়ে। প্রদীপের অভিযোগ, “লন্ডনে থাকেন বছরের অর্ধেক সময়। কংগ্রেসে যাঁর ছ’মাসও হয়নি, তাঁকে কোন যুক্তিতে দক্ষিণ কলকাতার মতো কঠিন আসনে প্রার্থী করা হল?” পালটা যুক্তি দিয়ে মিতা বলেছেন, “সাউথ কলকাতায় আমার বাড়ি। সেখানে বড় হওয়া, পড়াশোনা করা। সাউথ কলকাতা প্রেসটিজিয়াস কনস্টিটিউয়েন্সি। এখানে অনেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। প্রার্থী না হতে পেরে তাঁদের খারাপ লাগার জায়গা থাকতে পারে। কিন্তু আমি দলের প্রার্থী। একক ইচ্ছায় নির্দল হিসাবে দাঁড়াইনি।” কংগ্রেসের কাছে দক্ষিণ কলকাতা এখনও ‘লস গ্রাউন্ড’। এই অবস্থায় মিতার প্রতিভায় কংগ্রেস কতটা উজ্জ্বল হয়, সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.