স্টাফ রিপোর্টার: বয়সে, পদে অনেকটা সিনিয়র। তাই সরাসরি কিছু না বলতে পারলেও তাঁকে নিয়ে কথা উঠলেই ভ্রূ কুঁচকে যাচ্ছে নেতৃত্বের অনেকেরই। প্রকাশ্যে না হলেও ঘনিষ্ঠ মহলে সোমবারও দিনভর আলোচনায় রইলেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। আরেক প্রাক্তন সোমেন মিত্রকে নিয়ে বলতে গিয়ে এমন মন্তব্য তিনি করে বসেছেন, যাতে বিতর্কের জাল তাঁকে যতটা না জড়িয়েছে, আঙুল তুলেছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েই। প্রশ্ন উঠেছে, সোমেন মিত্রকে নিয়ে বলার আর কি কিছু ছিল না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহিষ্কারের প্রসঙ্গই কেন টানতে হল? এক প্রদেশ নেতার কথায়, “সোমেনবাবুকে নিয়ে স্মৃতিচারণের মতো অসংখ্য ঘটনা, গল্প বা তাঁর সাহসিকতার প্রসঙ্গ রয়েছে। কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গই প্রদীপবাবু তুলে বিতর্কটা বাধালেন?”
প্রসঙ্গ যদি তুলেও থাকেন, তাতেই বা কী? এআইসিসির এক সদস্যর বক্তব্য, বিস্তর টানাপোড়েনের পর প্রদেশ নেতৃত্ব ‘একলা চলো’ অবস্থান নিয়ে নিজের পায় দাঁড়াতে চাইছে। এতদিন সে আরেকজনের উপর ভর দিয়ে চলছিল। কিন্তু দলের কর্মীরা নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন, নিজের পা শক্ত না হলে কেউ তো দাঁড়াতেই পারবে না। তাই একলা চলাই দরকার। সেই নেতার প্রশ্ন, “এআইসিসির সবুজ সঙ্কেতে সংগঠন মজবুত করতে রাজ্য সফরে বেরিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। এই অবস্থায় প্রদেশ সভাপতির উপস্থিতিতে একটা মঞ্চে প্রকাশ্যে দলের সিনিয়র নেতা ২৫ বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দল থেকে বহিষ্কার নিয়ে ক্ষতির কথা বলছেন, প্রায়শ্চিত্তের কথা বলছেন! এর কী প্রভাব হতে পারে সেটা কি বুঝিয়ে বলতে হবে? গোটা দায়টা কি প্রদেশ নেতৃত্বের উপর যায় না? এআইসিসির একরকম নির্দেশের পর প্রকাশ্য মঞ্চে মমতা বন্দে্যাপাধ্যায় না থাকায় দলের কী ক্ষতি হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়ায় কি প্রদেশ নেতৃত্বের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না?” ফলে দলের একটা বড় অংশের ইঙ্গিত, প্রদীপবাবুর এই কথায়, দলের ঘাড়েই দায় চেপেছে। সেক্ষেত্রে এআইসিসি কি এ নিয়ে কৈফিয়ত চাইতে পারে? এআইসিসির যা কাজের ধরন তাতে এ নিয়ে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে তা এআইসিসি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে চাইবে বলে মনে করছে নেতৃত্বের সিংহভাগ।
প্রাক্তন আরেক সভাপতি অধীর চৌধুরী ইঙ্গিতে যে কথা আগেরদিন বলেছেন, তা অবশ্য এদিন বেশিরভাগই সমর্থন করেননি। অধীর আগেরদিন বলেছিলেন, সামনে রাজ্যসভার ভোট আছে বলে হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কারও আফসোস হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু অনেকের মতোই এক সিনিয়র রাজ্য নেতার বক্তব্য, “প্রদীপদা-র কংগ্রেসে ৫০ বছর হয়ে গেল। এই বয়সে তাঁর মানসিকতার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ভেবে আফসোসের কথা বলেছেন এটা ভাবাই যায় না। প্রদীপদাকে নিয়ে অধীরের এই অনুমান ঠিক না।” অনেকের আবার মত, প্রদীপদা ঠিকই বলেছেন। বাকিটা সংবাদমাধ্যমের কারসাজি। তবে এক নেতার বক্তব্য, “প্রদীপবাবু প্রফেসর মানুষ। তিনি সোজা কথা স্পষ্ট বলতে ভালবাসেন। তবে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতির বিচারে প্রদীপবাবুর বলা কথায়, প্রথম লাইনের বদলে দ্বিতীয় লাইনে জোর পড়ে গিয়েছে। সেটাই বিতর্ক তৈরি করে দিয়েছে।” আর প্রদীপবাবুর এদিন কী বক্তব্য? প্রকাশ্যে আর এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ হলেও ঘনিষ্ঠ মহলে এদিনও তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহিষ্কার নিয়ে সোমেনবাবুর উপর দায় চাপানো হয়েছে বারবার। তা যে ভুল ছিল সেটা বলতে গিয়েই ওই প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.