বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: সোমেন মিত্রর দেখানো পথেই বামেদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনের কর্মসূচি চলবে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সমঝোতা করে লড়াই করবে। শুক্রবার একথা স্পষ্ট করে দিলেন এ রাজ্যে AICC পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ। এদিন সকালে প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সদ্যপ্রয়াত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর অনুপস্থিতিতে নতুনভাবে কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন। তবে পরবর্তী প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব কার কাঁধে চাপবে, সে বিষয়ে হাইকম্যান্ডই সিদ্ধান্ত নেবে, প্রদেশ নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন গৌরব গগৈ। আর পরবর্তী প্রদেশ সভাপতির পদ নিয়ে রীতিমতো গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে বিধানভবনে।
অসুস্থ শরীরেই দলের কর্মসূচির পাশাপাশি রাজ্যে বামেদের সঙ্গে তৃতীয় বিকল্প গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বাম নেতৃত্বের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠকও করেন। যৌথ আন্দোলন কর্মসূচিতে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নেতৃত্ব দেন। এই অবস্থায় আচমকা সোমেন মিত্রর (Somen Mitra)চলে যাওয়া জোট গঠনের কাজে প্রাথমিকভাবে ধাক্কা খাবে বলে মনে করছিলেন বাম নেতারা। একই আশঙ্কা ছিল প্রদেশ কংগ্রেসের জোটপন্থী নেতাদেরও। যেহেতু জোট গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাই কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হচ্ছিল।
সম্ভবত সেই বিষয়ে আশ্বস্ত করতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মৃত্যুর পরদিন সকালেই রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ ও AICC’র সম্পাদক বি পি সিং। রাজ্য নেতৃত্বের মনোভাব বুঝতেই তাঁদের এই বৈঠক বলে প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর। বৈঠকে বামেদের সঙ্গে জোট গঠন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। সূত্রের খবর, প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ অধিকাংশ নেতৃত্ব এক্ষেত্রে সোমেন মিত্রর দেখানো পথেই আগামীদিনে চলার পক্ষে সায় দেন। এছাড়াও দলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে হাজির সকলের মতামত শোনেন এআইসিসির দুই নেতা। তাঁদের মতামত হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন গৌরব গগৈ।
তবে সূত্রের খবর, পরবর্তী প্রদেশ সভাপতি কে হতে পারেন তা নিয়ে বিস্তারিত কোনও আলোচনা এদিনের বৈঠকে হয়নি। কয়েকমাস পরেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তাই দ্রুত হাইকমান্ডকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন জানান হয় রাজ্য নেতৃত্বের তরফে। তবে সভাপতির চেয়ারে বসার ইঁদুরদৌড় যে শুরু হয়ে গিয়েছে, তা বলাইবাহুল্য। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই দৌড়ে সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ও কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেতা অধীর চৌধুরির নাম সামনে আসছে। কিন্তু অধীরের কাজের চাপ প্রচুর। সংসদে দলের পুরো দায়িত্ব তাঁকেই সামলাতে হয়। তুলনায় প্রদীপ ভট্টাচার্যর চাপ অনেকটাই কম। বামেদের সঙ্গে জোট গঠনের ক্ষেত্রে তিনি সবসময় সোমেন মিত্রর সঙ্গে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে বাম নেতৃত্বের সম্পর্কও বেশ মসৃণ। কিন্তু অভিজ্ঞতায় ভরসা রাখা হবে, নাকি তুলনায় বয়সে কম নেতৃত্বকে সামনের সারিতে তুলে আনবেন সোনিয়া-রাহুল গান্ধীরা? তাও দেখার বিষয়। সেক্ষেত্রে শুভঙ্কর সরকার বা অমিতাভ চক্রবর্তীদের মতো কমবয়সী কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তা নিয়েও আলোচনা চলছে বিধানভবনের অন্দরে।
প্রয়াত সোমেন মিত্রের সম্মানে রাজ্য কংগ্রেসের সব রাজনৈতিক কর্মসূচি আগামী ৭ দিন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জেলায় জেলায় স্মরণসভা করা হবে। আর কলকাতায় কেন্দ্রীয়ভাবে হবে স্মরণসভা। সেখানে সব দলের নেতৃত্বকে আহ্বান জানান হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে এদিনের বৈঠকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.