গৌতম ব্রহ্ম: মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে আসার আস্ত রূপকথা। যার নায়ক একটি যন্ত্র। লেফট ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস (এলভিএডি, সংক্ষেপে এলভ্যাড) নামের সেই যন্ত্রনায়কের কেরামতিতেই হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া এক চুয়ান্ন বছরের রোগীকে দ্বিতীয় জীবন দিল কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতাল। তৈরি করল নয়া ইতিহাস।
২০১৮ সালের ২১ মে এই শহর দেখেছিল প্রথম হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন। ডা. তাপস রায়চৌধুরী ও ডা. কে এম বন্দনার নেতৃত্বে ৩০ জনের টিম ইতিহাস গড়েছিল। বেঙ্গালুরু থেকে চার্টার্ড বিমানে হার্ট উড়িয়ে আনা হয়েছিল। এবার অবশ্য গ্রিন করিডর গড়তে হয়নি। কারণ, এই হৃদযন্ত্রটি কৃত্রিম, বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। দাম অবশ্য একটু বেশিই। ৩০-৮০ লক্ষ টাকা।
২২ মার্চ এমনই একটি তিরিশ লাখি যন্ত্র বসল এক রোগীর বুকে। টাইটেনিয়াম ও চুনি দিয়ে তৈরি কৃত্রিম হৃদযন্ত্রটি মিনিটে ন’হাজার পাক ঘুরতে পারে। সেই মহামূল্য ঘূর্ণিযন্ত্র বুকে নিয়ে আপাতত হাসপাতালবাস করছেন প্রৌঢ় রোগী। যাঁর নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই কার্ডিও থোরাসিক সার্জন ডা. কুণাল সরকার জানাচ্ছেন, “পূর্ব ভারতে এই প্রথম কোনও হাসপাতাল কৃত্রিম হৃদযন্ত্র বসাল। এর দৌলতে রোগী পাঁচ-সাত বছর অনায়াসে বেঁচে থাকতে পারবেন। ইমিউনো সাপ্রেসিভ ওষুধ লাগবে না। শুধু রক্ত তরল রাখার একটি ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে।” জানা যাচ্ছে, চার্জ দিতে হবে ১২ ঘণ্টা অন্তর। ব্যাগে করে বইতে হবে ব্যাটারি।
প্রোটোকলের খাতিরে রোগীর নাম প্রকাশ করেনি হাসপাতাল। কুণালবাবুর কথায়, “ওঁর বাড়ি ছত্তিশগড়ের রায়পুরে। বয়স ৫৪। বারো সপ্তাহ আগে হার্ট অ্যাটাক হয়। বহু চেষ্টাতেও প্রতিস্থাপনের জন্য হার্ট জোগাড় করা যায়নি। ফলে এলভিএডি (LVAD) ছাড়া উপায় ছিল না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Medical College Kolkata) কার্ডিও-থোরাসিক সার্জন অধ্যাপক ডা. প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, “এ সব ক্ষেত্রে হার্ট প্রতিস্থাপনই সবচেয়ে ভাল। তবে যত দিন তা না করা যাচ্ছে, এলভিএডি-ই বাঁচার একমাত্র পথ। ইদানীং যন্ত্রটি পাঁচ-সাত বছরও চলছে। সমস্যা একটাই। প্রতি ১২ ঘণ্টা অন্তর রিচার্জ করতে হয়।” বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, হৃৎপিণ্ডের বাম নিলয়ের সঙ্গে তার দিয়ে যুক্ত যন্ত্রটি শরীরের ভিতর থাকলেও তার ব্যাটারি থাকে একটা ব্যাগের ভিতর। যা কার্যত সবসময় বয়ে বেড়াতে হয় রোগীকে। “টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটে একবার এক রোগী ব্যাটারি না নিয়েই চলে এসেছিলেন। সে এক ভয়ংকর অবস্থা। রোগীকে বাঁচাতে ব্যাটারিটি তাঁর বাড়ি থেকে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে আনতে হয়”,বললেন কুণালবাবু।
চেন্নাই ও দিল্লির কয়েকটি হাসপাতাল এই কৃত্রিম হৃদযন্ত্র সাফল্যের সঙ্গে বসিয়েছে। কলকাতাতেও একজন এলভ্যাড লাগানো রোগী রয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার ওই রোগী সিঙ্গাপুর থেকে যন্ত্র লাগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কলকাতায় এমন অপারেশন এই প্রথম। অন্তত কুণালবাবুদের তাই দাবি। প্লাবনবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, হার্ট প্রতিস্থাপনকারী সব হাসপাতালই এই যন্ত্র লাগাতে সক্ষম। তবে বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার। আসলে দাম অত্যন্ত বেশি বলেই কেউ এগোতে সাহস পায় না। জানা গিয়েছে, আশি লাখের যন্ত্রও রয়েছে। তবে মুকুন্দপুরের মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি যে যন্ত্রটি বসিয়েছে, তার দাম প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। অস্ত্রোপচার-সহ চিকিৎসাবাবদ খরচ হয়েছে আরও ১০ লক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.