মলয় কুণ্ডু: নির্দিষ্ট প্রকল্পের কাজের জন্য সময় এবং অর্থ বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার। প্রকল্পের কাজে দেরি হলে স্বাভাবিকভাবেই সেই খরচ বেড়ে যায় কয়েকগুন। নির্দিষ্ট সময়ে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় বাড়তি ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে রাজ্যকে। এমন ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য জেলাশাসকদের কড়া বার্তা দিল নবান্ন। একইসঙ্গে অবাঞ্ছিত খরচেও রাশ টানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার নবান্ন থেকে জেলাশাসকদের সঙ্গে ভারচুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী (H K Dwivedi)। নবান্ন সূত্রে খবর, বৈঠকে একাধিক প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ার বিষয়টি জেলাশাসকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কাজের গতি শ্লথ হওয়ায় প্রকল্পের জন্য যে খরচ ধরা হয়, দেখা গিয়েছে তার থেকে অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তা যদি না হয়, তবে রাজ্যের মানুষের জন্য নেওয়া মানবিক প্রকল্পগুলিতে আরও জোর দেওয়া সম্ভব হবে। পরবর্তী ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কড়া নজরদারি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। পাশাপাশি, জেলায় জেলায় টিকাকরণে জোর দিতে এবং সেফ হোমগুলি প্রয়োজন না থাকলে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে।
কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য টাকা কয়েক হাজার কোটি। তার উপর গত কয়েক বছরে কোভিডের (COVID-19) জেরে সব কিছু বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে। অথচ এর মধ্যেই রাজ্য সরকার একদিকে মানবিক প্রকল্প, অন্যদিকে পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ করে চলেছে। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণ বৈঠকে প্রকল্পের কাজে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা এবং দপ্তরের মন্ত্রীদের সামনে একের পর এক উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দেন, প্রকল্পের কাজ চলছে ধীর গতিতে। তা যে কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না, সেই বার্তাও দিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন জেলাশাসকদের সঙ্গে মুখ্যসচিবের বৈঠকে প্রকল্পগুলি ধরে ধরে বিশ্লেষণ করা হয়। কোথায় কত কাজ বাকি, কবে শেষ করার কথা ছিল, কেন শেষ হয়নি, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নবান্ন সূত্রে খবর, উৎকর্ষ বাংলা, ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে স্কুলের পোশাক দেওয়া, শিল্প তালুক, জেলায় পূর্ত দপ্তরের বেশ কয়েকটি প্রকল্পে প্রয়োজনীয় জমির জোগাড়, শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত বলেই মনে করছে প্রশাসনের শীর্ষ মহল।
মুখ্যমন্ত্রী স্কিল ডেভলপমেন্ট নিয়ে যে নির্দিষ্ট রূপরেখা চূড়ান্ত করে দিয়েছিলেন, তার কাজও যথেষ্ট গতি পায়নি। প্রকল্পের ব্যয়ও তাই অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে যাচ্ছে। এটা যে কোনওভাবে আটকানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব (Chief Secretary of West Bengal)। সেক্ষেত্রে কোনও বিষয়ে অসুবিধা হলে তা তাঁকে জানাতে হবে। কোনওভাবেই যেন প্রকল্পের কাজে দেরি না হয়, তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের।
মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে জরুরি প্রকল্প ছাড়া অন্য কোনও প্রকল্প নেওয়া যাবে না। নয়া প্রকল্প নিতে হলে তার জন্য অনুমতি নিতে হবে অর্থ দপ্তর ও মুখ্যসচিবের। করা যাবে না অপ্রয়োজনীয় খরচও। কারণ, মানবিক প্রকল্পে আরও জোর দিতে চায় রাজ্য সরকার। যাতে রাজ্যের সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা পান। এদিন সেই প্রসঙ্গ নিয়েও একদফা আলোচনা হয় বলে খবর। নবান্নের নির্দেশ, কোন কোন বিষয়ে খরচে রাশ টানা যায় তা নির্দিষ্ট করে দ্রুত কার্যকর করতে হবে। আগেই অবশ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে সেই নির্দেশ পেয়েছেন জেলাশাসকরা। প্রকল্পগুলির কাজ কেমন চলছে, তার উপর জেলাশাসকদের নজরদারি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন মুখ্যসচিব। টিকাককরণে জোর দিতে বলা হয়েছে। প্রথম ডোজ পাওয়ার পর যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ নেননি, তাঁদের চিহ্নিত করে তা দেওয়া এবং পনেরা থেকে আঠারো বছরে বয়সীদের টিকাককরণেও বাড়তি গুরুত্ব দিতে জেলাশাসকদের বলা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.