ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কেউ দিয়েছেন একশো টাকা। কেউ এক লক্ষ! যে হাত বাড়িয়ে পাঠক এতদিন বই নিয়েছেন, দুর্যোগে সেই হাতিই বাড়িয়ে দিয়েছেন বইকে বাঁচাতে। বইপাড়াকে বাঁচাতে। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত গিল্ডের অ্যাকাউন্টে যা অর্থ সাহায্য এসেছে তাতে যেমন ১০০ টাকা বা ৩২৫ টাকাও পড়েছে, তেমনই জমা পড়েছে এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকার অনুদানও।কে কে রয়েছেন সেই তালিকায়? রয়েছেন বাংলার রাজ্যসভার এক সাংসদ, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী এবং একাধিক ব্যবসায়ী। তবে কে কেমন সাহায্য করেছেন তা নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি গিল্ড। সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “যিনি গিল্ডকে একশো টাকা দিয়েছেন, তাঁর সম্মান যতটা, যিনি এক লক্ষ বা তারও বেশি দিয়েছেন, তাঁরও সম্মান ততটাই। সকলের তো একটাই লক্ষ্য, বাংলার দীর্ঘ ঐতিহ্যের গর্বের সঙ্গী বইপাড়াকে বাঁচানো। তাই অর্থ কে কী পরিমাণ দিলেন তা আমাদের কাছে গৌণ।”
শনিবার পর্যন্ত পাঁচ লক্ষ টাকা গিল্ডের তহবিলে জমা পড়েছে। তাতে অর্থ সাহায্য করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। সভাপতি মনে করিয়ে দিয়েছেন, “সাংসদ হিসাবে নয়, ডেরেক যা সাহায্য করেছেন তা একেবারেই ব্যক্তিগতভাবে।” গিল্ড স্থাপিত হয় ১৯৭৪-এর ১৮ সেপ্টেম্বর। সেই সময় আটজনের কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন বিখ্যাত ক্যুইজ মাস্টার নীল ও’ ব্রায়েন। বাবার সুবাদেই গিল্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ডেরেকের। সেই কারণেই তাদের আবেদনে ডেরেক সাড়া দিয়েছেন বলে জানিয়েছে গিল্ড। এছাড়াও রয়েছে কবি-সাহিত্যিক শ্রীজাত, নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়দের অনুদান। দেশ শুধু নয়, একাধিক অনুদান এসেছে অস্ট্রেলিয়া বা লন্ডনের বিভিন্ন দেশের একাধিক সংগঠনের কাছ থেকেও। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে যে সমস্ত দেশকে থিম কান্ট্রি করে কলকাতা বইমেলার আয়োজন হয়েছে সেই সব দেশের বিভিন্ন বইপ্রেমী বাঙালি সংগঠন বা ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে সাহায্য পাঠিয়েছেন। বইপাড়ার জন্য সাহায্যের আবেদন করে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি দেওয়া হয়েছে পিএম কেয়ারস ফান্ডেও।
৩০ জুন পর্যন্ত এই অ্যাকাউন্ট চালু থাকবে। এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে, অ্যাকাউন্টে জমা পড়া টাকার অডিট করে তা দুর্গতদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হবে। যার প্রথম শর্ত হিসাবে বলা হয়েছে, গিল্ডের কেউ এই টাকার ভাগ পাবেন না। সভাপতির কথায়, “গিল্ডের সদস্যদেরও অনেকেরই অনেক ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত যে, আমরা কেউ এ টাকার ভাগ নেব না। এমনকী, আমাদের সহযোগী প্রকাশনা কোনও সংস্থাও না।” তবে কারা এই টাকার হকদার? “যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তারাই। আর সেটা দেখবেন প্রাক্তন বিচারপতি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি”, বলছেন গিল্ড কর্তা।
শুধু গিল্ড নয়, বইপাড়াকে বাঁচাতে আরও একাধিক কমিটি হয়েছে। দীপ প্রকাশনের সঙ্গে একাধিক প্রকাশনা সংস্থা মিলিতভাবে একটি তহবিল গড়েছে। তাদের কাজও দ্রুত এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন দীপ প্রকাশনের কর্ণধার তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রকাশক সভার সাধারণ সম্পাদক শংকর মণ্ডল। তাঁরাও এই তহবিল থেকে একটা টাকাও নিজেদের ক্ষতিপূরণের জন্য নেবেন না। এর আগে গিল্ডের কাছে তাঁরা আবেদন করেছিলেন একসঙ্গে একটি তহবিল গড়ার। তা সম্ভব হয়নি। শংকরবাবুর কথায়, “যাঁরা বইয়ের স্টল চালান, তাঁরাই তো প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁদের পুঁজিও নেই। তাই যে টাকা উঠবে আমরা চেয়েছিলাম সম্মিলিতভাবে সেই টাকা তাঁদের হতে তুলে দিতে। আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু তা হল না।” গিল্ড সভাপতি বলছেন, “সংগঠনটির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আরও অনেকেই এমন তহবিল গড়েছেন। কিন্তু আমাদের আগে যাঁরা করেছেন তাঁরাও আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। আবার এই সংগঠনটি যখন আসে তখন আমাদের তহবিল খোলা হয়ে গিয়েছে।” তিনি আরও বলেছেন, “উদ্দেশ্য যখন এক তখন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
এদিকে, সব বাধা কাটিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে শুকতারা আর নবকল্লোলের পুজো সংখ্যা। খুব সম্ভবত আগস্টেই হাতে মিলবে ৭২ বছর পার করা শুকতারা আর ৬০ পেরনো নবকল্লোল। দুই পত্রিকার প্রকাশনা সংস্থা দেব সাহিত্য কুটিরের কর্ণধার রূপা মজুমদার পাঠকদের ইতিমধ্যেই আশ্বাস দিয়েছেন এ বিষয়ে। ঝড়-জলে তাঁদের কলেজ পাড়ার দোকানেই ক্ষতি হয়েছে ছয় লক্ষ টাকার। ঝামাপুকুরের অফিসে ক্ষতি আরও চার লাখের। এই অবস্থায় ৩০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ চালাচ্ছে তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.