রাহুল চক্রবর্তী: বাজারে পিঁয়াজ নটআউট ১৫০। বাজারদরের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের চোটে গ্যালারির বাইরে চলে গেল কফি হাউসের ‘সিগনেচার ডিশ’ অনিয়ন পকোড়া। তার সঙ্গে সঙ্গে মাটন আফগানি, চিকেন আফগানি, বেকড ফিশও আপাতত ‘রিজার্ভ বেঞ্চে’। রান্নায় বেশি পিঁয়াজ দরকার হওয়া এই মেনুগুলির বিক্রি এখন বন্ধ থাকবে বলেই কফি হাউস কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে।
পিঁয়াজের দামের ঝাঁজে আম গেরস্থ থেকে রইস রেস্টুরেন্ট নাকের জলে-চোখের জলে। অবস্থা নাজেহাল বললেও কম বলা হয়! আগে সপ্তাহব্যাপী যা পিঁয়াজ লাগত, এখন তার অর্ধেকের অর্ধেক কিনতে হচ্ছে। নিদেনপক্ষে না দিলেই নয়, এমন তরকারিতে দিতে হচ্ছে পিঁয়াজ। আম বাঙালির ঘরে কার্যত লেখা হয়ে গিয়েছে, রান্নাবান্নায় পিঁয়াজ এখন গঙ্গাজল ছিটানোর মতো করে। রাস্তার পাইস হোটেলগুলিতে পিঁয়াজের কারবার প্রায় বন্ধ। স্যালাডে উধাও পিঁয়াজ। সামাল দিতে হচ্ছে মূলো দিয়ে। চাঁদনি চকের একটি চপের দোকানে আগে পিঁয়াজির দাম ছিল পাঁচ টাকা প্রতি পিস। পরে হল আট টাকা থেকে দশ টাকা। এখন সেটাও বন্ধ।
আর হবে না-ই বা কেন! দামবৃদ্ধিতে সেঞ্চুরি তো আগেই করে নিয়েছে পিঁয়াজ। এবার কোনও কোনও বাজারে দেড়শোও পেরিয়ে গিয়েছে। আর এতেই মেনু থেকে ‘অনিয়ন পকোড়া’ বাদ দিয়ে দিল ইন্ডিয়ান কফি হাউস। বইপাড়ায় গিয়ে কফি হাউসে বসে অনিয়ন পকোড়া চেখে দেখেননি, এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। যাঁরাই কফি হাউসে এসেছেন, তাঁদের প্রথম পছন্দ অনিয়ন পকোড়া। ৩২ টাকা ওনিয়ন পকোড়া দৈনিক বিক্রিও হয়েছে শতাধিক প্লেট, জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য, পিঁয়াজের আকাশছোঁয়া দামবৃদ্ধিতে আর সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। তাই ‘সিগনেচার ডিশ’ হওয়া সত্ত্বেও শুক্রবার থেকে অনিয়ন পকোড়া বিক্রি বন্ধ করে দিতে হল। দাম কমলে আবার তা চালু করা হবে।
এই অবশ্য প্রথম নয়। বছর কয়েক আগে পিঁয়াজের দামবৃদ্ধিতে একবার দু’চার দিনের জন্য অনিয়ন পকোড়া বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে দাবী কফি হাউস কর্তৃপক্ষের। তবে এবার যেভাবে দাম বৃদ্ধির রেকর্ড পিঁয়াজ প্রতিদিনই ভাঙছে, তাতে কবে আবার কফি হাউসে অনিয়ন পকোড়া চালু হবে কিনা, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই।
শুক্রবার ভরা বিকেলে কফি হাউসের ব্যালকনিতে সুখটান দিতে দিতে কলেজ পড়ুয়া তমোঘ্ন দাসের বক্তব্য, “যেদিনই আসি অনিয়ন পকোড়া না খেয়ে যাই না। আজ শুধু কফি খেতে হল। দাবি একটাই, শীতের কামড় শুরু হওয়ার আগে পিঁয়াজের দাম যেন কমে।” প্রায় একই মত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী উপাসনা রায়ের। জানালেন, “বন্ধুদের সঙ্গে কফি আর অনিয়ন পকোড়া ভাগ করে খাওয়ার স্মৃতি অনেক। আর কফির সঙ্গে পকোড়ার জায়গা অন্য কোনও ডিশ নিতে পারবে না।”
কফিহাউসে মাটন আফগানি, চিকেন আফগানি, বেকড ফিশও আপাতত বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেক্রেটারি মনে করতে পারছেন না গত ২৫ বছরে আফগানি মটন কিংবা চিকেন বন্ধ করতে হয়েছিল কি না। আধিকারিকদের বক্তব্য, বিভিন্ন আইটেমের জন্য প্রতিদিন ৪০ কেজি করে পিঁয়াজ লাগে। কয়েকটি মেনু বাদ দিয়ে এখন দিনে ১৫-২০ কেজি পিঁয়াজ কিনে চালানো হবে। আর স্যালাডে শসা, বিট, গাজর বেশি থাকবে। পিঁয়াজ নামমাত্র ছোঁয়ানো হবে। যাতে পিঁয়াজ-পিঁয়াজ গন্ধটা অন্তত থাকে। অতএব, এবার পকোড়া ছেড়ে শুধু গন্ধ নিয়েই জমাতে হবে কফিহাউসের আড্ডা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.