শুভঙ্কর বসু: রং কানা! এমন অভিযোগ তুলে চাকরি কেড়ে নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সেই অন্যায়ের সুবিচার পেলেন কর্মী। কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে অবশেষে হারানো চাকরি ফেরত পেলেন সারথি পাধিয়ারি নামে এক যুবক।
কিন্তু কেন কর্মরত সারথিকে বর্ণান্ধ বা ‘রং কানা’ বলে গণ্য করল কেন্দ্রীয় সংস্থা কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (Coal India)? জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৩’র জানুয়ারিতে। ওই সময় কোল ইন্ডিয়াতে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে চাকরি পান সারথি। নিয়ম অনুযায়ী, এই পদে চাকরির জন্য শারীরিক পরীক্ষা বা মেডিক্যাল টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন। রাঁচির গান্ধীনগর হাসপাতাল থেকে সেই প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পান সারথি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরির জন্য উপযুক্ত গণ্য করে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দেয়। যার ভিত্তিতে তিনি কাজে যোগদানের ছাড়পত্র পান। কিন্তু এক বছরের মধ্যে তাঁর নামে ‘ভিজিল্যান্স রিপোর্ট’ জমা পড়ে। যেখানে উল্লেখ করা হয় সারথির চোখ বা দৃষ্টিশক্তি ঠিকমতো পরীক্ষা না করেই তাঁকে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল।
ভিজিল্যান্সের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চটজলদি একটি কমিটি গঠন করে কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। এরপর বাধ্যতামূলকভাবে ধানবাদে ভারত কোকিং কোল লিমিটেডের সেন্ট্রাল হসপিটালে সারথির চোখ পরীক্ষা হয়। রিপোর্টে জানানো হয়, তিনি ‘আংশিক বর্ণান্ধ’। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কোল ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর সারথিকে চাকরি থেকে বরখাস্তের সুপারিশ করেন। তৎক্ষণাৎ কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাঁকে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের নোটিস ইস্যু করেন।
এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সারথি। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এজলাসে মামলাটি উঠলে সারথির পক্ষে রায় দিয়ে আদালত জানিয়ে দেয়, কোম্পানি তাঁকে ছাঁটাইয়ের যে নোটি দিয়েছে, তা অবৈধ। যখন সারথি চাকরি পান, সেসময় তাঁকে পুরোপুরি ফিট বলে সার্টিফাই করেছিল করেছিল গান্ধীনগর হাসপাতাল। হঠাৎ করে মাঝ পথে তাকে এভাবে ‘আনফিট’ গণ্য করা যায় না। প্রয়োজনে তাঁকে কোম্পানির অন্য বিভাগে বদলি করার নির্দেশ দেন বিচারপতি মুখোপাধ্যায়।
এরপর আদালতের নির্দেশমতো সারথিকে মাইনিং বিভাগ থেকে সিস্টেম বিভাগে বদলি করে কোম্পানি। এরপর গত ৫ বছর সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে চলতি বছরের জুলাইয়ে ওই একই কারণ (বর্ণান্ধতা) দেখিয়ে সারথিকে ফের বরখাস্তের নোটিস দেয় কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। অগত্যা ফের আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া তাঁর কোনও উপায় ছিল না। মামলার শুনানিতে তাঁর আইনজীবী সৌম্য মজুমদার প্রশ্ন তোলেন, গত ৫ বছর ওই বিভাগে কাজ করছেন সারথি। হঠাৎ করে কেন আবার বর্ণান্ধতার প্রশ্ন তুলছে কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ? বিষয়টি শুনে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, মামলার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সারথিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে পারবে কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.